একজন পান্তাবুড়ির গল্প


Dhaka | Published: 2019-06-28 20:53:21 BdST | Updated: 2024-05-21 00:50:55 BdST

একজন পান্তাবুড়ির গল্প

খেটে খাওয়া সর্বহারাদের একজন প্রতিনিধি পান্তাবুড়ি, যার সারাদিনের শেষ সম্বল ভাতটাও চুরি করে এক চোর। শেষে অতিষ্ট হয়ে পান্তাবুড়ি যায় রাজার কাছে নালিশ জানাতে। গিয়ে দেখে সেই চোর আসলে রাজার সাগরেদ। রাজাই তাকে তোষণ করে, লালন-পালন করেন। আপত্তি শোনে রাজা পান্তাবুড়িকে তাড়িয়ে দেন। রাজা বলেন, এটি সামান্য ঘটনা। তখন পান্তাবড়ির সঙ্গী হয় রাস্তায় পড়ে থাকা বেল, সিঙ্গি মাছ, গোবর ও ছুরি। যারা চোর ধরতে পান্তাবুড়িকে সাহায্য করে। শেষ অবধি দেখা যায় রাজাই আসল চোর এবং তিনি এই চুরি করতেই আসেন বুড়ির বাড়িতে। পান্তাবুড়ি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ধরে ফেলে চোরকে। সাজা দেয়া হয় চোর রাজাকে। উচ্ছেদ হয় রাজতন্ত্র। আর আগের চোর তখন সাধারণের দলে এসে যোগ দেয় এবং সে জানায়, রাজার হাতের মোয়া হয়ে সে এতোদিন চুরির কাজ করছিলো।

গোবর, সিঙ্গি মাছ, ছুরি আসলে সমাজের সর্বহারা মানুষ যারা একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। আর পান্তাবুড়ি হলো তাদেরই কাণ্ডারি।

এভাবেই সমাজের বাস্তব চুরি যাওয়া সাধারণ মানুষের দুঃখের ইতিহাসকে পান্তাবুড়ি গল্পে তোলে ধরা হয়েছে। পান্তাবুড়ি মূলত একটি মূকনাট্য। সমাজের কাছে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে পৌঁছে যাওয়াই এই মূকনাটকটির উদ্দেশ্য।

সম্প্রতি এই মূকনাটকটি তৈরি করেছে কলকাতার সোমা মাইম থিয়েটার। নাটকটি প্রথম প্রদর্শিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উতসবে।

চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন এর আয়োজনে তৃতীয় আন্তর্জাতিক মূকাভিন উতসবে কলকাতার সোমা মাইম থিয়েটার ছাড়াও অংশ নিয়েছিলো ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মূকাভিনয় দল। উতসবের সমাপনি দিনে ছিলো সোমা মাইম থিয়েটারের অনবদ্য প্রযোজনা পান্তাবুড়ির প্রদর্শনি।

মূকনাটকটির গল্প বুনতে সাহায্য করেছেন কলকাতার প্রখ্যাত নাট্যকার শ্রী মৈনাক সেনগুপ্ত। গান রচনায় ছিলেন দীপ মান্না। মিউজিক দিয়েছেন ভাবিনি চৌধুরী, মঞ্চ লাইটিংয়ে ছিলেন শহিদুল বাশার মুরাদ, কনসেপ্ট এবং পরিচালনায় সোমা দাস, প্রযোজনা -সোমা মাইম থিয়েটার। অভিনয়ে ছিলেন শ্রীমতি সোমা দাস (পান্তাবুড়ি), সুমন বসাক (চোর), দীপ মান্না (রাজা ), অয়ন্তিকা দাস (অন্যান্য ), অচিন্ত্য ঘোষ (অন্যান্য )।

প্রখ্যাত শ্রী উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী র পান্তাবুড়ির গল্প থেকে এটি নেওয়া। মূলত আজকের সমাজের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে এই গল্পকে ব্যাঙ্গাত্মক মোড়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমাজের সমস্ত চুরির একটি বাস্তব চিত্র এখানে চিত্রায়িত হয়। যেখানে আজকের দিনে পান্তাবুড়ির মতো একজন সাধারণ অসহায় মানুষের ও ভাত চুরি যায় রোজ।