শিক্ষকদের মারধর, জিডি-পাল্টা জিডি

শাহ আলী বাগদাদী (রহ:) কামিল মাদরাসায় তালা


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-03-08 22:02:53 BdST | Updated: 2024-05-09 08:16:48 BdST

রাজধানীর মিরপুরে ঐতিহ্যবাহী হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ:) কামিল মাদরাসায় তালা ঝুলছে। সরকারদলীয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গ্রুপ মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের মারধর করে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছে। তারা মাদরাসা কম্পাউন্ডে থাকা কয়েকজন শিক্ষকের বাসাবাড়ি ভাঙচুরসহ ঘরের মালামাল লুটে নেয় এবং নারীদের সাথে অশালীন ব্যবহার করেছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার আত্মীয়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার জন্যই এতকিছু ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদরাসার শিক্ষকেরা। ঘটনার ব্যাপারে দুইজন শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, হজরত শাহ আলী (রহ:) কামিল মাদরাসায় বর্তমানে শিক্ষকসহ স্টাফ সংখ্যা ৩০ জনের মতো। শিক্ষার্থী সংখ্যা ছয় শতাধিক। জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে ১২ নম্বরে রয়েছেন শিক্ষক মৌলভী কে এম সাইফুল্লাহ। তিনি ক্ষমতাসীনদের স্থানীয় একক নেতার আত্মীয়। যে কারণে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি দখল করে নেন। এ নিয়ে শিক্ষকেরা মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের ডিজির বরাবর আবেদন করলে কে এম সাইফুল্লাহকে বাদ দিয়ে মো: আবদুস সামাদ নামের এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। এ নিয়েই শিক্ষকদের সাথে কে এম সাইফুল্লাহর বিরোধ চলে আসছিল। গত সোমবার দুপুরের দিকে কে এম সাইফুল্লাহ স্থানীয় ৫০-৬০ জন মাস্তান নিয়ে ওই মাদরাসায় হানা দেন। সে সময় শিক্ষক আবদুস সামাদ ও আবদুল করিমসহ সবাই যার যার কাসে পাঠদানে ব্যস্ত ছিলেন। মাস্তানরা তাদের মধ্যে এক একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সামনে কাস থেকে বের করে অফিস কক্ষে নিয়ে আসে। শিক্ষার্থীদের সামনেই শিক্ষককে মারধর করা হয়। অফিস কক্ষে বসেছিলেন এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। শিক্ষককদের কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, অফিস কক্ষে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষককে বেদম মারধর করা হয়। পরে সাদা কাগজ ও মাদরাসার প্যাডে স্বাক্ষর রেখে তাদের মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। আবদুল করিম নামের অন্য এক শিক্ষককে অফিস কক্ষে বেদম মারধর করা হয়।

মাদরাসা থেকে শিক্ষকদের মারধর করে বের করে দিয়ে মাদরাসায় তালা লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অন্য একজন শিক্ষক আফজাল হোসেনের বাসায় গিয়ে ভাঙচুর চালায়, লুটপাট করে এবং নারী-শিশুদের নির্যাতন করে। সেখানে আফজালের স্ত্রীর সাথে অশালীন আচরণ করে দুর্বৃত্তরা। শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, তার আশঙ্কা তাকে পেলে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলত। ঘটনার পর তিনি আর বাসায় যাননি। তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক এখন পালিয়ে আছেন বলে জানান। আফজাল বলেন, ছাত্রদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে শিক্ষকদের মারধরের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক।

দুর্বৃত্তদের হামলার ভয়ে মঙ্গলবার কোনো ছাত্র-শিক্ষক মাদরাসায় যাননি বলে জানা গেছে। শিক্ষকেরা বলেছেন, মাদরাসায় তালা মেরে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি আইনিভাবে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই এর সমাধান দিতে পারবে। ঘটনার ব্যাপারে দারুস সালাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে নির্যাতিত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে।

এ দিকে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাজার কর্তৃপক্ষ পাল্টা জিডি করেছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, যে শিক্ষকেরা মার খেয়েছেন উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই জিডি করা হয়েছে। এ দিকে ঘটনার ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি বলেছেন, ঘটনার ব্যাপারে পাল্টা-পাল্টি জিডি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

বিদিবিএস