রাখাইনের ধ্বংসস্তুপে স্টামফোর্ডের সাবেক শিক্ষার্থী সাংবাদিক সুজা উদ্দিন


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2017-11-29 06:27:51 BdST | Updated: 2024-05-22 05:20:55 BdST

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এসেছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর গণমাধ্যম ও অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিডিমর্নিংয়ের ডেপুটি নিউজ এডিটর এএসএম সুজা উদ্দিন। তাঁর এই সফর শেষ হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের একদিন আগে।

গণহত্যা কিভাবে চালানো হয় সেটি এখনো ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে জানাতে পারেনি কেউ। এটি অবশ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগদের বাধার মুখে সম্ভব হচ্ছে না। সেই বাধার গণ্ডি পেরিয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতেই রাখাইন পরিদর্শনে একাই (সাংবাদিক হিসেবে) যান সুজা উদ্দিন। তিনি ২০ নভেম্বর মিয়ানমারের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেন। সেখানে তিনি সর্বসাকুল্যে ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করতে সক্ষম হন। ইঞ্জিন নয়, হাতে বৈঠা টানা নৌকায় দুই মাঝিসহ তারা তিনজন। নৌকা ছাড়ার আগেই পোশাক পরিবর্তন করেন তারা, যাতে কেউ দেখলে মাঝি মনে করে। উজানে নৌকা চালিয়ে রাত ৩ টায় কাঁটাতার পার হয়ে মিয়ানমারে ‘কোয়াংচিবং’ এলাকায় পৌছায় বলে জানান সুজা উদ্দিন।

এএসএম সুজা উদ্দিন বলেন, আমি ভাবতে পারছিলাম না যে ফিরে আসবো। আমি যা দেখেছি তা ভেবে আজও ভয় পাই। ইউরোপের স্কাই টিভিতে গোটা বিষয়টি প্রচার করেছে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর গণমাধ্যম ও অধ্যয়ন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার তপন মাহমুদ ক্যাম্পাস টাইমসকে বলেন, ঝুঁকি সাংবাদিকতার একটা বড় বিষয়। কিন্তু ততটুকু নেয়া উচিত, যতটকু করলে জীবন বিপন্ন না হয়। আশা করি, সব কিছু মেনেই সুজা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এটা তার সাংবাদিকতার জন্য বড় অর্জন। তার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার এতে আরো সমৃদ্ধ হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার জন্য শুভকামনা আর ভালবাসা থাকলো।

এদিকে সুজা উদ্দিনের এমন সাহসিকতায় গর্বিত তার সহপাঠিরা। নাফরুল হাসান নামের এক সহপাঠি ক্যাম্পাস টাইমসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত থাকা অবস্থায় সুজা দেশ-বিদেশে ব্যতিক্রমধর্মী অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছে। বিশেষ করে নিপীরিত মানুষদের নিয়ে তার কাজের বিষয়টি সবার নজরে আসে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এসে সে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই গর্ব করার মতো। সহপাঠি হিসেবে আমরা সবাই তার এমন কাজে গর্বিত।

মিয়ানমার যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এএসএম সুজা উদ্দিন বলেন, কুতুপালং কাস্টম থেকে একটু দূরে লম্বাবিল টেংখালি খালে ‘ঢেউবুইন্যা ব্রীজ’ থেকে যাত্রা শুরু। সোমবার (২০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায়। তিন ঘণ্টা নৌকায়। মাঝ পথে কিছু সময় নদীতে সুজানের (ভাটির) জন্য অপেক্ষা। রাত আড়াইটার সময় রাখাইনের ‘কোয়াংচিবং’ গ্রামে পা রাখি। মোট সাড়ে নয় ঘণ্টা রাখাইন রাজ্যে থাকার পর ‘কোয়াংচিবং’ পাড়ার বক্করের বাড়ির পাশ দিয়ে পরদিন দুপুর ১টার সময় কাঁটাতার পার হয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করি। বিকেল চারটায় কাস্টমের ‘ঢেউবুইন্যা ব্রীজে’ ফিরে আসি। মোট সাড়ে আঠারো ঘণ্টা জার্নির সাড়ে নয় ঘণ্টা রাখাইন রাজ্যের ‘কোয়াংচিবং’ গ্রামের অন্তত আট’শ ঘর দেখার সুযোগ হয়। মগদের উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম আর ক্যামেরার চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই দ্রুত ফিরতে হয়েছে।

তিনি জানান, টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য খুব কম দৃশ্যই ক্যামেরায় ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। তবুও অন্তত এক ঘণ্টার ভিডিও ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ছবি (স্টিল পিকচার) তোলা সম্ভব হয়েছে অনেকগুলো। সেখানে কাঁটাতারের পাশে ল্যান্ড মাইনের ভয় সাথে থাকা রোহিঙ্গাদের আধামরা করেছিল। ১৮ ঘণ্টার এই সময় প্রত্যেকটা মুহুর্ত কেটেছে ভয় আর মৃত্যুকে হাতে নিয়ে।

          রাখাইনের ধ্বংসস্তুপে স্টামফোর্ডের সাবেক শিক্ষার্থী সাংবাদিক সুজা উদ্দিন

 

বিডিমর্নিংয়ের ডেপুটি নিউজ এডিটর বলেন, ‘আরো কিছু সময় অবস্থান করার ইচ্ছে ছিল। তবে মগদের উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম। ভয় বেড়ে গেল। তখন দ্রুত কাঁটাতার পার হয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হই। এসময় শরীরের বিভিন্ন অংশে কাঁটাতারের আঘাতে কেটে যায়। তখন আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই। ভয় এবার দ্বিগুণ বেড়ে যায়। পানি সাঁতরিয়ে কাঁটাযুক্ত পথে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠি।

এমএস/ ২৯ নভেম্বর ২০১৭