বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অঙ্গ সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড এর ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ২৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সংগঠনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড, কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে আজ সকাল ১০টায় ধানমণ্ডি বত্রিশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স। সংগঠনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে "দেশবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা" শীর্ষক আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সংগঠনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেনবাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব (প্রশাসন) বীর মুক্তিযোদ্ধা এমদাদ হোসেন মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খাদিমুল বাশার জয়, সাধারণ সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভার বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাত আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। আগামীতে রাজাকারের বংশধরদেরকে আবার পরাজিত করে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি জয়লাভ করবে। কোন স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। বিএনপি-জামাত আবার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। খুনী জিয়ার দোসররা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছে। অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে সমুচিত জবাব দিবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। বিএনপির সমাবেশে রাজাকার সাকা চৌধুরীর পুত্রের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বক্তব্যে তা আবার প্রমাণিত হয়েছে। এদেরকে সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বেঁচে থাকতে কোন রাজাকারের দলকে এদেশে রাজনীতি করতে দিবে না। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সে প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বিএনপির মুখপাত্রের মতো আচরণ করছে যা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে পিটার হাসের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আবার রাজপথে নেমে এসে একাত্তর সালের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদেরকে সমুচিত জবাব দিতে বাধ্য হবে।"
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব (প্রশাসন) বীর মুক্তিযোদ্ধা এমদাদ হোসেন মতিন বলেন, "একাত্তর সালের ন্যায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামবো। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোন ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। একাত্তরে পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির কোন ষড়যন্ত্র এদেশে কখনোই সফল হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রিন্স ও সাধারণ সম্পাদক মামুনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ডকে দেশব্যাপী আরোও গতিশীল করতে হবে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক নেতৃবৃন্দরা তোমাদের পাশে থেকে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কারণ সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে তোমাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, "স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবশ্যই দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির পক্ষে সবসময় আমাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সেদিনের কথা আমরা ভুলে যায়নি। এদেশে কোন ধরনের অগণতান্ত্রিক সরকারকে আমরা আর কখনোই দেখতে চাইনা। বর্তমান গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোন ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিবো না। একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসরদের রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।"
সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, "১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অঙ্গসংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড সমগ্র বাংলাদেশে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে। দেশবিরোধী অপশক্তির বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ডের পূর্বের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ঢেলে সাজানোর জন্য খুব শীঘ্রই প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করা হবে। দেশবাসীকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ডের পক্ষ থেকে ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে খুব শীঘ্রই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড।"
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই আমাদের অঙ্গীকার-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সমগ্র বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ করে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ ও রাজাকারদের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবিতে খুব শীঘ্রই রাজপথে নামবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের কোন সন্ত্রাসী আন্দোলনের নামে আগামীকাল ২৮ অক্টোবরে কোন ধরনের নাশকতা বা সন্ত্রাস করলে তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি বিএনপি ও জামাত-শিবির রাজাকারদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও এদের বংশধরদের নাগরিকত্ব বাতিল ও সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। জামাত ইস্যুতে "নতুন বোতলে পুরনো মদ" থিওরী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কখনোই মেনে নিবে না। জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি এদেশে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্য কোন নামেও জামায়াতকে এদেশে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিয়ে সকল দলকে রাজনীতি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধন করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বাধ্য করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধে এদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন কমিশন ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।দেশের যেকোন প্রান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর কোন আঘাত আসলে সেখানে যেয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমাদের সংগ্রাম চলমান থাকবে। খুব শীঘ্রই আমরা দেশব্যাপী কমিটি গঠন ও দায়িত্ব বন্টনের মাধ্যমে সাংগঠনিক সফর শুরু করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।"