সফলতা-ব্যর্থতার সমীকরণে জাককানইবি উপাচার্যের চার বছর


সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন | Published: 2017-08-13 17:56:57 BdST | Updated: 2024-05-12 02:26:14 BdST

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম নিয়োগের চার বছর পূর্ণ করলেন। গতকাল ১২ আগস্ট (শনিবার) মোহীত উল আলমের নেতৃত্বে জাককানইবি প্রশাসন চার বছর অতিবাহিত করেছে। উপাচার্যের বিগত চার বছরের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সফলতা-ব্যর্থতার উভয় দিকগুলোই এসেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করেন, সূষ্ঠুতা এবং স্থিতিশীলতার মধ্যে দিয়ে অন্যান্য উপাচার্যের সময়কাল থেকে এই উপাচার্য সুন্দরভাবে চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছে। হয়তো সামনে যারা আসবেন তার দেখানো পথেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রেখে সামনের দিকে হাঁটবে বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে বর্তমান উপাচার্যের স্বদিচ্ছা থাকলেও তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেননি তবে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা, শিক্ষাগত মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে জাককানইবি উপাচার্যের সাফল্য হিসেবে দেখছেন সবাই। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রপতির আদেশে অধ্যাপক মোহীত উল আলমকে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই নতুন উপচার্যের কাছে ‘পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রূপরেখা’ তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান ‘শিক্ষক মঞ্চ’র ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।

রূপরেখায় শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম-অংশদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যাসহ প্রভৃতি দাবি ছিল। যদিও এই রূপরেখা খুলেও দেখেননি বলে দাবি করেন শিক্ষক মঞ্চের শিক্ষকরা।

চার বছরের সাফল্যে ব্যর্থতা মূল্যায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাস টাইমস’কে বলেন, “জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে যে প্রত্যয় নিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন তা অনেকাংশে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় যে দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে এটাই কেউ কেউ তার সফলতা হিসেবে মনে করে। কিন্তু সম্প্রতি অডিও ক্লিপে যে রেকর্ড রয়েছে তা উন্নয়ন ও নৈতিকতার পরিপন্থী এবং দুর্নীতির পরিচায়ক বহন করছে। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্পিরিট বা পরিবেশ থাকার কথা সেটি এখানে অনুপস্থিত ছিল”।

সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো জাহিদুল কবীর বলেন, “এই উপাচার্যের সময়ে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের জন্য একটি মাইলফলক। এই উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে আরো এগিয়ে নিতে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাদের পরিচয় দিতে

গর্ববোধ হয়। বর্তমান উপাচার্যের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ছিল না”। পরিশেষে তিনি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলমকে একজন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের গত চার বছরের সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করে তাকে শতভাগ সফল বলা যাবে না। তবে তিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কারণ তার সময় প্রশাসনের ক্ষেত্রে একটা স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে অন্যরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এটা যেমন সত্য আবার বিভিন্ন বিভাগে বিদ্যমান সেশনজট, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্যাম্পাসের ইন্টারনেট সমস্যা এবং সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে তিনি কার্যকরী ভূমিকা পালনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজন প্রীতির অভিযোগ তার সাফল্যের পথকে অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেও মনে করেন তারা।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাহাবউদ্দিন বাদল বলেন, “উপাচার্য মহোদয়ের সদিচ্ছা থাকলেও তিনি অনেক কিছু বাস্তবায়ন করতে পারেন না। কিছু বিষয় তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিনি আরো বলেন, গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয় যে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে তা অত্যন্ত স্বস্তির বিষয়। বিশেষ করে আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি তাদের জন্য এটি আরামদায়ক সুখবার্তা”।

টিআই/ ১৩ আগস্ট ২০১৭