শ্রেণিকক্ষে আসন ১০০, শিক্ষার্থী ভর্তি নেয় দুইশতধিক


Studentjournalbd | Published: 2020-01-29 04:51:09 BdST | Updated: 2024-05-09 18:19:26 BdST

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত দেশর গর্বের বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। উচ্চশিক্ষায় দেশের নেতৃত্ব স্থানীয় এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন একটি বিভাগ ইসলামিক স্টাডিজ। বিভাগটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর প্রায় দুই শত শিক্ষার্থী ভর্তি হন। অর্থ্যাৎ সে হিসেবে অনার্স-মাস্টার্সসহ পাঁচ শিক্ষাবর্ষে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে বিভাগটিতে।

ঐতিহ্যবাহী এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আক্ষেপের বিষয় হলো- এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ। সেগুলো হলো- কলা ভবনের ২০২৪ এবং ২০২৫ নম্বর কক্ষ। শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। এতে ১০০ জন শিক্ষার্থীর আসন থাকলেও ব্যাচ ভেদে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে সেখানে ঠাঁসাঠাঁসি করে বসতে হয়। শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্যান্য বিভাগ এবং সেমিনার রুমেও ক্লাস নেওয়া হয়। সেগুলোতেও আসন সংখ্যা শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় সীমিত।

অন্যদিকে সেকশন বিন্যাস না থাকায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে একটি সেকশনের অধীনে একসাথে ক্লাস করতে হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ পাচ্ছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ।

দাঁড়িয়ে ও ফ্লোরে বসে ক্লাস করতে হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, এই তীব্র আসন সঙ্কটের কারণে শ্রেণিকক্ষের ৬ জনের জায়গায় ৮ জন বসেছে। অনেকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করছে। কেউ বা শিক্ষকের ডায়াসের পাশে বসে ক্লাস করছে। এর ফলে এতোগুলো শিক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য ক্লাস যেন বাজারে পরিণত হয়েছে। যার ফলে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

এসব বিষয়ে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুল ইসলাম শোভন বলেন, ক্লাসে বসার জায়গা নিয়ে সমস্যা আছে। শিক্ষর্থী সংখ্যার তুলনায় সীমিত সংখ্যক আসনের কারণে আমরা ক্লাসে বসার জায়গা পাই না। পাশাপাশি ক্লাস রুমের যে পরিবেশ সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারি না। তাছাড়া বসার জায়গা ভালো না হওয়ায় লেকচারের প্রয়োজনীয় নোট নিতে পারছি না। এতে করে আমাদের লেখাপড়ার মান খারাপ হচ্ছে।

শোভন আরো বলেন, শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের সমাধান যদি না করা হয়, তাহলে যেন বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানো হয়। প্রতি বছর এতোগুলো শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়ে তাদের জন্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করে একরকম প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের।

মাজহারুল ইসলামের নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বি-ইউনিট ছাড়াও অন্যান্য ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই শ’ এরও বেশি। নতুন বছরে এই সাবজেক্টের উপর শর্তারোপ করায় এবার শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ জনের মত। যদিও সংখ্যা কমেছে তথাপিও ক্লাসের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী এটা বিশাল সংখ্যা।

তিনি আরো বলেন, “দুইটি রুম থাকায় অনেক সময় দেখা যায় একটি ব্যাচের ক্লাস চলমান অবস্থায় অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লাস করার জন্য। ক্লাসরুমে ঢোকা এবং বের হওয়ার দৃশ্য দেখলে শিক্ষার সেই পরিবেশ পাওয়া যায় না যা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একান্ত কাম্য। বিষয়গুলো রীতিমত একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এ বিষয়ে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে ১০২২ নম্বর রুমটা আমাদের বিভাগের জন্য বরাদ্ধ দেওয়ার জন্য কাজ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচনের পরে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট সমাধানে আপনারা কোন ধরণের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সঙ্কটের কথা অস্বীকার করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের এই দুটো ছাড়া আরো আছে। এ সময় তিনি অন্যান্য বিভাগ ও সেমিনার কক্ষের কথা উল্লেখ করেন। যেগুলো বিভাগের নিজস্ব নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে নিজস্ব ও ধার করা শ্রেণি কক্ষগুলোতেও শিক্ষার্থীর তুলনায় পর্যাপ্ত আসন না থাকার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এতো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চাই না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বরাদ্ধ দেয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানবে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মন্তব্য জানালে তিনি বলেন, অনুষদের (কলা অনুষদ) ডিনকে বিভাগের সমস্যা বিষয়ে জানিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।