কুবির সেই শিক্ষক মাহবুবুল হককে ছুটিতে পাঠাল প্রশাসন


কুবি টাইমস | Published: 2017-08-18 03:25:34 BdST | Updated: 2024-05-11 16:02:59 BdST

জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ ওঠা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদারের সই করা দুটি অফিস আদেশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে অফিস আদেশের কপি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান, প্রক্টরসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদেশ অনুযায়ী আগামী রোববার থেকে এক মাসের জন্য ছুটিতে যেতে হবে শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাঁদের দ্বিতীয় পরীক্ষা গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষাটি ব্যবহারিক হওয়ায় সেটি নিয়ে নানা সমস্যার কথা শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবসে বিভাগের সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে জানান। পরে বিভাগের সভাপতি জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার পর অফিসে তাঁদের ডাকেন। ওই ব্যাচের ৪৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ জন শিক্ষার্থী মঙ্গলবার তাঁর কাছে যান। মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার কক্ষে জায়গা না হওয়ায় তিনি সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ১০৬ কক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন। সেখানেই পরীক্ষার বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিভাগের সভাপতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে কথা বলার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেখানে যান। পরে ওই কক্ষে তাঁদের দেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।

এদিকে শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষকের থাকার ঘটনাকে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধার পরিপন্থী উল্লেখ করে তাঁকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বহিষ্কারের দাবিতে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষে সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন (সবুজ)। তা না হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দেয় সংগঠনটি।

অবশ্য শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, মঙ্গলবার যা ঘটেছে সেটি এরকম, আমি সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আসি। এরপর যথারীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল দেওয়া শেষে ওই খানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মধ্যে কিছু স্টুডেন্ট এসে বলে, তাঁরা কিছু বিষয় বুঝছে না, একটু সময় দিতে। আমি তাঁদের ডিপার্টমেন্টে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলি। এর কিছুক্ষণ পর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি, ওঁরা (শিক্ষার্থী) সংখ্যায় প্রায় ১০-১২ জন। আর এর মধ্যেই আমার আরেকজন সহকর্মী অন্য ডিপার্টমেন্টের আরো দুজন সহকর্মীসহ রুমে আসেন। এ অবস্থায় তাঁদের সঙ্গে ওই রুমে বসে কথা বলা সম্ভব ছিল না, কারণ রুমে এত মানুষের বসার জায়গা ছিল না। আমি স্টুডেন্টদেরকে পাশের একটি রুমে বসতে বলি এবং নিজেও একটু পরে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’

‘আদতে ওই ব্যাচের ক্লাস অনেক আগেই শেষ। সেমিস্টার ক্যালেন্ডার এবং এরই মধ্যে শুরু হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন সে প্রমাণই বহন করছে। সুতরাং ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।’ যোগ করেন ওই শিক্ষক।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই অফিস আদেশ জারি করা হয়। যেখানে বলা হয়, ‘আপনি জনাব মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচি চলার সময় আপনার ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনাকে আগামী ২০-০৮-২০১৭ খ্রি. তারিখ হতে ১৯-০৯-২০১৭ তারিখ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ছুটি প্রদান করা হলো।’

তদন্ত কমিটি : কুবির রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান মজুমদারের আরেক আদেশে বলা হয়েছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। উক্ত কর্মসূচি চলার সময়ে জনাব মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কু.বি. কর্তৃক তাঁর বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিষয়টি তদন্তপূর্বক স্বল্পতম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে কমিটি গঠন করা হলো।’ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কুবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা. মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। সদস্য হিসেবে আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন কুবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের ও সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী।

এমএন/ ১৭ আগস্ট ২০১৭