অবশেষে ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন বেরোবির শিক্ষার্থী সোহেল রানা


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2017-08-22 00:10:03 BdST | Updated: 2024-05-22 08:51:58 BdST

অবশেষে ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। গত দুই বছরে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের তিনবার দেয়া আদেশ অমান্য করেন সাবেক উপাচার্যের প্রশাসন।

সোমবার (২১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, উপাচার্য মহোদয় সোহেল রানার শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর অনুমতি প্রদান করেছেন। তার ছাত্রত্ব ফিরে পেতে আর কোনো বাধা নেই।

তিনি আরও বলেন, সোহেলের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের স্থগিত রাখা ফল প্রকাশসহ পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। খবর জাগো নিউজ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সোহেল রানা। এরপর কোমরে অস্ত্রোপচার করার কারণে প্রায় দুই বছর তিনি ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও গত বছরের এপ্রিল মাসে তার শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোহেল রানা হাইকোর্টে রিট করেন। এতে ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের স্থগিত করে রাখা ফলাফল প্রকাশ এবং তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে ভর্তি করে নিয়ে তাকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ প্রদান কেন করা হবে না এই মর্মে, বেরোবি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতরসহ ছয়জনের ওপর নিশি রুল জারি করেন আদালত।

আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়িত না করায় গত বছরের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে সোহেল রানার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ লেখাপড়ার সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে সোহেল রানাকে একক সিদ্ধান্তে বিভিন্নভাবে ঘোরাতে থাকেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।

সর্বশেষ গত বছরের ২৯ মার্চ কোনো কারণ ছাড়াই ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তিগ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। ওই বছরের ২০ এপ্রিল আদালতের সর্বশেষ আদেশের কপিসহ আবেদনপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দফতরে জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে তা গ্রহণ করিয়ে নেন সোহেল।

ওই দিন এবং তারপরের দিন ২১ এপ্রিল সোহেল রানাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন আটকে রাখে। সেখানে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা হয়। বলা হয়, হাইকোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশন তুলে না নেয়া হলে তাকে লেখাপড়ার করার সুযোগ দেয়া হবে না। ভর্তিও করা হবে না। তাদের কথা না শুনলে সে কোনোদিন পাস করতে পারবে না। ওই শিক্ষার্থীকে পাস করতেও দেয়া হবে না বলেও হুমকি প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

এদিকে গত বছরের ২১ এপ্রিল সোহেল রানার পুনঃভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর স্বাক্ষরিত চিঠি প্রদান করা হয়। চিঠি পেয়ে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল নির্দেশনা মোতাবেক আবেদন করেন ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু পুনঃভর্তি কার্যক্রম শুরু না করে কেবল হাইকোর্টকে দেখাতেই ওই প্রতারণামূলক চিঠি প্রদান করা হয়।

উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, শুধুমাত্র সাবেক উপাচার্যের উদাসীনতায় আমার জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হলো। আশা করছি, বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব।

কথা বললে সোহেল রানার শিক্ষক বাবা আব্দুল কাদের বলেন, অন্যায়ভাবে সাবেক উপাচার্য আমার ছেলেকে পড়াশোনা থেকে বিরত রেখেছিল। তিনি হাইকোর্টের আদেশও অমান্য করেছেন। নতুন উপাচার্যের সদয় দৃষ্টিতে অবশেষে আমার ছেলে ছাত্রত্ব পেতে যাচ্ছে।

এমএস/ ২১ আগস্ট ২০১৭