'সামিয়া ও মারজানের গবেষণা চুরি তদন্ত করতে গিয়ে নানান ধরনের চাপ আসে'


ঢাবি টাইমস | Published: 2020-09-12 01:57:27 BdST | Updated: 2024-04-28 00:22:51 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বেশ কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তাদের বিষয়ে একাডেমিক অপরাধের শাস্তি সুপারিশ করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।

এবিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া তৎকালীন প্রো-ভিসি অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ দেশের অন্যতম অনলাইন সংবাদ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন বলেন, “প্লেইজারিজমের যে অভিযোগ ছিল, আমাদের তদন্তে দ্যাট হ্যাজ বিন প্রোভেন (তা প্রমাণিত হয়েছে)। আমাদের তদন্তে তাদের যৌথভাবে লেখা ছয়টি গবেষণা নিবন্ধনে প্যারার পর প্যারা হুবহু নকল পাওয়া গেছে।”

সামিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার পাশাপাশি টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ এবং অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করেন। অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মাহফুজুল হক মারজান এক সময় সামিয়া রহমানের ছাত্র ছিলেন।

সামিয়া রহমান শ্রেণিকক্ষে থাকার চেয়েও বেশি থাকেন টিভির পর্দায়

তাদের নিয়ে তদন্ত করতে নানা ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।

নাসরীন আহমাদ বলেন, “আমাদের কলিগদের বিষয়ে যখন কোনো অভিযোগ ওঠে, আমরা চেষ্টা করি খুব কেয়ারফুলি দেখতে, যাতে তাদের উপর কোনো অন্যায় না হয়।

“কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমরা যখন ইনকোয়ারি শুরু করি, চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। অনেক হৈ চৈ শুরু হয়। যাই হোক, আমরা আমাদের মতো কাজ করেছি।”

নিজের অসুস্থতার কারণে তদন্তে একটু সময় বেশি লেগেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তো অনেক আগেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি। দেরিতে কেন বিষয়টা সিন্ডিকেটে উঠল? সেটা দেখে অবাক হলাম।”

এ প্রসঙ্গে সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ বলেন, গবেষণাকাজে চৌর্যবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিৎ।

“প্লেইজারিজমের জন্য যে শাস্তি, তা হবে ঠিক আছে। কিন্তু এই যে বার বার প্লেইজারিজম হচ্ছে, তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর হওয়া উচিৎ। আমরা এটাও নোটিস করেছি, ইদানিং প্লেইজারিজম বেশি বেশি হচ্ছে। কীভাবে আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করব, তার একটা সুস্পষ্ট আইন থাকা দরকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। কিন্তু সেখানে চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়ই চৌর্যবৃত্তির ঘটনা ঘটছে।

তদন্ত কমিটি চৌর্যবৃত্তি নিয়ে নীতিমালা তৈরি করতেও সুপারিশ করেছে বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

তিনি বিডিনিউজ বলেন, “৭৩ এর অর্ডারে প্লেইজারিজম বলতে তো কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষকদের কেউ অনৈতিক কাজ করলে, তা নিয়ে আইন রয়েছে।

“প্লেইজারিজম অনৈতিক কাজের মধ্যেই পড়ে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে এটাও সুপারিশ করেছি, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্লেইজারিজম নিয়ে নীতিমালা তৈরি করে।”

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ নামক আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।

তবে তা ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।