২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১৯ দাবি কুবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের


Al Shahriar | Published: 2024-08-12 20:55:05 BdST | Updated: 2024-09-07 18:22:56 BdST

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবিরের পদত্যাগসহ মোট ১৯ দাবি পেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগামী পাঁচ কর্মদিবস অর্থাৎ ১২০ ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুবি উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১২ আগস্ট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের দ্বারা সাক্ষরিত দাবিসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের নিকট জমা দেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রেজিস্ট্রার নিজেই।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৯ দাবিগুলো হলোঃ

১. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী/শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারী সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিদ্যমান সকল দল বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে, কাউকে রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

২. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ' (কুকসু) গঠন করতে হবে। তবে যেসকল শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে কোন প্রকার রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলো তাদের প্রতিনিধিত্ব গৃহীত হবে না।

৩. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের প্রতি সংহতি প্রকাশ না করে স্বৈরাচারী সরকারকে মৌন সমর্থন দেয়ায় বর্তমান শিক্ষক সমিতিকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে 'শিক্ষার্থীদের কোন একাডেমিক ক্ষতি হয় এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতি নিতে পারবে না' এই মর্মে মুচলেকা প্রদান করতে হবে।

৪. উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির স্যারকে আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।

৫. ছাত্র উপদেষ্টা, পরিচালক ও নির্দেশনা দপ্তরে দায়িত্ব রত অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান কে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে ও পূর্বের শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়ে যদি কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে থাকে তবে সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে।

৬. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিতে হবে এবং যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত নৈরাজ্যকে দমন করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করতে হবে।

৭. হলগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং শেখ হাসিনা হলের নতুন নামকরণ নথিভুক্ত করে অফিসিয়াল প্রজ্ঞাপন জারি ও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হলে যেসকল অবৈধ শিক্ষার্থী অবস্থান করছে তাদের বের করতে হবে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান নতুন করে কোন শিক্ষার্থীকে আবাসিকতা দেয়া যাবে না।

৮. হলে র‍্যাগিং, গণরুম সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে এবং হলে মেধা, যোগ্যতা, আর্থিক অবস্থা ও বাসস্থানের দূরত্ব বিবেচনায় সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. প্রতিটি বিভাগে 'শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতির' ব্যবস্থা করে বক্স স্থাপন করে সেমিস্টার ভিত্তিক মূল্যায়ন করতে হবে।

১০. সেমিস্টার পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের আইডি নাম্বারের পরিবর্তে বোর্ড পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তরপত্রে বিশেষ কোড ব্যবহার করতে হবে এবং সেকেন্ড এক্সামিনি নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এমনকি ধর্মীয় বিধিনিষেধ এর কারণে ড্রেসআপ দেখে মার্ক্স কমানো যাবে না। যদি কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিং এর প্রমাণ মিলে তবে তাকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

১১. পরীক্ষার ইনকোর্স সম্পন্ন করা, ইনকোর্স এর ফলাফল ও ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে সবকিছুতে এক্সাম রুল কঠোরভাবে পালন করতে হবে।

১২. বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিভাগে যোগ্যতার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য Teaching Assistantship, Research Assistantship এবং Internship এর আইন করতে হবে। সম্মানজনক সম্মানির পাশাপাশি নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা লাগবে।

১৩. ক্লাসের রুটিন শিক্ষার্থী বান্ধব হতে হবে। বিশেষ করে অনার্স ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্স এর ব্যাচগুলোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয় এমন রুটিন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৪. যদি কেউ সমন্বয়ক দাবি করে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করে বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে কিংবা অতিরিক্ত সুবিধা হাসিল করতে চায় তাকে তৎক্ষনাৎ বহিষ্কার করতে হবে ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।

১৫. বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেসকল রাজনৈতিক নেতা দ্বারা বিভিন্নভাবে হেনস্তার স্বীকার হয়েছে সেসকল রাজনৈতিক নেতা/কর্মীকে বহিষ্কার করতে হবে।

১৬. নতুন রুটিন অনুযায়ী বাসের সিডিউল নতুন করে করতে হবে এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য যে একাডেমিক ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে ও আগামী ১৮ ই আগস্ট থেকে স্বশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

১৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগে শিক্ষক সংকট এবং বিভিন্ন টালবাহানায় নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে, বিভাগগুলোর দাবীর ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে ইউজিসি থেকে নিয়োগ আদেশ নিয়ে আসতে হবে এবং শিক্ষক সংকট সমাধান করতে হবে।

১৯. এবছরের চলমান পরিস্থিতিতে যেসব বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রাম বর্ধিত হবার কথা ছিলো তা বর্ধিত না করে এক বছরের অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় রাখতে হবে।

এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, 'আমি শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ পেয়েছি। কিন্তু আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য স্যার নেই বর্তমানে, থাকলে আমি খুব জলদিই এগুলোর সমাধান করতাম। তাও আমি আশাবাদী তাদের দেওয়া পাঁচ দিনের মধ্যেই আমরা এই দাবিগুলোর সমাধান করতে পারবো।'