বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে হারালো বায়ার্ন


Dhaka | Published: 2020-08-15 09:04:03 BdST | Updated: 2024-04-27 15:24:09 BdST

দুঃস্বপ্নও যেন এমন ভয়ংকর হয় না যেমনটা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে প্রথম অর্ধেই দেখল। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের লিসবনে মুখোমুখি বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখ। যেখানে ম্যাচের প্রথমার্ধেই লিওনেল মেসিদের জালে গোলের হালি উৎসব পূর্ণ করেন থমাস মুলার-রবার্ট লেভান্ডোফস্কিরা। আর দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ধারা অব্যাহত রেখে কাতালানদের ওপর চলে বাভারিয়ানদের টর্নেডো। শেষ বাঁশি বাজলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে মেসিরা কেননা ম্যাচের সমাপ্তি যে হলো বায়ার্নের ৮-২ গোলের জয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে এটিই আট গোলের প্রথম ইতিহাস।

বায়ার্নের মিউনিখের হয়ে এদিন যেন স্বংয় ফুটবল দেবতা ভর করেছিল থমাস মুলারের কাঁধে। ম্যাচের প্রথমার্ধে রীতিমত ছেলেখেলা করলেন লিওনেল মেসিদের নিয়ে। ম্যাচের তখন মাত্র ৪ মিনিট, রবার্ট লেভান্ডোফস্কির অ্যাসিস্ট থেকে প্রথম গোল করেন থমাস মুলার। এর ঠিক মিনিট সাতেক পর ডেভিড আলাবার আত্মঘাতি গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে বার্সা। তবে ওই শেষ। এরপর গুনে গুনে প্রথমার্ধেই আরও তিনবার টার স্টেগানকে বল খুটে আনতে গোলবারের ভেতরে পাঠায় মুলার-গ্ন্যাব্রিরা।

Goal.com

ম্যাচের ৩১ মিনিটের ভেতর বার্সার জালে ৪ গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল যেন ম্যাচের আধা ঘণ্টায় নিশ্চিত করে ফেলে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। বাকি সময়টা যেন ছিল শুরু নিয়মরক্ষার। ঠিক এমন লজ্জার সময় বার্সা কবে কাটিয়েছে তা খুঁজে বের করতে হলে ইতিহাসের বই নিয়ে বসতে হবে।

এদিন চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে বার্সেলোনা নিজেদের সবচেয়ে বুড়ো একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিল। আর গতিময় বায়ার্নের সামনে তাই তো টিকতেই পারল না লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজরা। এদিন মেসিকে যেন বোতল বন্দি করে রেখেছিল বায়ার্নের মধ্যমাঠ। ঠিক খোলস বন্দি মেসি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন আর তাই তো তার দলকে টেনে তোলার ভারটা আর কেউই কাঁধে তুলে নেয়নি।

বায়ার্নের দুর্দান্ত গতি আর হাই প্রেসিংয়ের সামনে তাল মেলানো তো দূরের ব্যাপার কোনো কৌশলই খুঁজে পাননি মেসিরা। বায়ার্নের আক্রমণের স্রোতে ভেসে গেছে বার্সা। ম্যাচের ৪ মিনিটে থমাস মুলারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। এরপর অবশ্য বার্সার আশার পালে হাওয়া লেগেছিল মিনিটে তিনেক বাদে ডেভিড আলাবার আত্মঘাতী গোলের পর বার্সা ম্যাচে ফিরেছিল কিছুটা। এরপর লুইস সুয়ারেজও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের সামনে। বার্সার দৌড় থেমেছে সেখানেই।

এরপর যেন মাঠে কেবল একটাই দল আর টার স্টগান। ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে বাম পাশ থেকে বাম পায়ের আড়াআড়ি শটে দ্বিতীয় গোল করেন ইভান পেরিসিচ। ২৭ মিনিটে সার্জ গ্ন্যাব্রি ব্যবধান করলেন ৩-১। আর ৩১ মিনিটে স্পট কিকের জায়গায় কোনা থেকে পা ছুঁয়ে মুলারও নাম লেখান স্কোরশিটে।

প্রথমার্ধে বার্সার জন্য স্কোরলাইন হতে পারত আরও বিব্রতকর। তবে গোলের সামনে খুনে রবার্ট লাভন্ডোফস্কি এদিন যেন গোল করায় ভুলে গেলেন। টার স্টেগানের ভুল পাসে ডি বক্সের ভেতরেই বল পেয়ে যান লেভান্ডোফস্কি তবে ফিরতি বল ওই স্টেগানের পায়ে লাগালে নষ্ট হয় সুযোগ। আর হয়ত গোলবারের সামনে আরেকটু খুনে হতে পারলেই বায়ার্নের গোল সংখ্যা হতে পারত পাঁচ এমনকি ছয়ও। তবে শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধ শেষে ৪-১ গোলের ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় বায়ার্ন।

হতাশ মেশি

বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় বার্সেলোনা। দিত্বীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে লুইস সুয়ারেজ গোল করে ব্যবধান ৪-২ করেন। আর তখনই ম্যাচের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নেয় বার্সা আর বলেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে কাতালানরা। তবে ম্যচে আর ফেরা হয়নি মেসিদের। যখনই ম্যাচের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিল বার্সা ঠিক তখনই স্টেগানের জালে আরও এক গোল। বায়ার্নের বা-প্রান্ত থেকে আলফোন্সো ডেভিস সেমেদোকে কাটিয়ে ঢুকে পড়েন ডি বক্সে আর তাকে আটকাতে এগিয়ে যান স্টেগান। তখনই বল সামনে বাড়িয়ে দেন জশুয়া কিমিচের দিকে। ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে একদম ভুল করেননি কিমিচ, সোজা পাঠিয়ে দিলেন জালে। আর বায়ার্নকে এগিয়ে নিলেন ৫-২ ব্যবধানে। তখনই যেন বার্সার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলেন কিমিচ।

শেষ দিকে আরও গোলের সুযোগ তৈরি করে বায়ার্ন তবে গোল মিসের মহড়ায় যেন নেমেছিল বাভারিয়ান স্ট্রাইকাররা। তবে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলেও গোল করতে তারা ক্লান্ত হয়নি। ম্যাচের ৮২ মিনিটে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ১৪তম গোল করেন রবার্ট লেভান্ডফস্কি। আর আধা ডজন গোল পূর্ণ করে বায়ার্ন। সেখানেই থেমে থাকেনি বায়ার্ন। ষষ্ঠ গোলের ঠিক মিনিট তিনেক পর বার্সেলোনা থেকে ধারে খেলতে যাওয়া ফিলিপ কোতিনহো বায়ার্নের ৭ম গোল করেন।

ম্যাচ জুড়ে কেবল আধিপত্য ছিল বাভারিয়ানদের। তবে ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্তও গোলের জন্য মরিয়া বায়ার্ন। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে কোতিনহো নিজের দ্বিতীয় আর বায়ার্নের ৮ম গোল করলে ইতিহাসে লেখা হয় নতুন এক রেকর্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের নকআউট পর্বে প্রথম কোনো দল ৮-২ গোলের ব্যবধানে জিতল।

আর দুই হালি গোল দিয়ে বার্সাকে বিদায় করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ।