বুয়েটের এ কেমন অমানবিকতা? যোগ্য হয়েও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেনা ১৪ ছাত্র


বুয়েট টাইমস | Published: 2018-09-20 08:05:15 BdST | Updated: 2024-07-03 05:37:17 BdST

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য হয়েও পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না ১৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষায় বসানোর মতো পর্যাপ্ত আসন না থাকায় এই ১৪ জনকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, পরীক্ষায় বসার আগেই পর্যাপ্ত আসন না থাকার অজুহাতে এভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়াকে অমানবিক বলে দাবি করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। সূচি অনুযায়ী, আগামী ৭ অক্টোবর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে এই বছর বুয়েটে ১ হাজার ৬০ টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তিপরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে আবেদনের সময় অসঙ্গতি, তথ্যে ভুল, যোগ্যতা না থাকা ও সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় বাদ পড়েছেন প্রায় ১ হাজার প্রার্থী। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে আবেদনকারী ১০টি সাধারণ বোর্ডের ১২ হাজার পরীক্ষার্থী এবং ইংরেজি মাধ্যমের ১৩৮ জনকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তালিকা প্রকাশ করেছে বুয়েট। যদিও সাধারণ ১০টি বোর্ড থেকে পাস করা ১২ হাজার ১৪ জন পরীক্ষার্থী আবেদনের সব ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ করে পরীক্ষার জন্য যোগ্য হলেও শেষ ১৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আসন না থাকার কারণে।

এদিকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বাছাই প্রক্রিয়ায় ছেঁটে না ফেলে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, এই পরীক্ষাটি মেধা মূল্যায়নের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগেই যদি ছেঁটে ফেলা হয়, তাহলে মেধার মূল্যায়ন হবে না।

ভর্তিবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবেদনের জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা ধরা হয় এসএসসিতে জিপিএ-৪ এবং গণিত, পদার্থ, রসায়ন,বাংলা ও ইংরেজিতে মোট জিপিএ’র ২২.৫ পয়েন্ট। আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাছাইয়ের জন্য যথাক্রমে আবেদনকারীর এইচএসসি পরীক্ষায় গণিত,পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ে প্রাপ্ত মোট নম্বর এবং গণিতে প্রাপ্ত নম্বর ও পদার্থ বিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বরকে অগ্রাধিকারের ক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ বিবেচনায় ১ থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে উল্লেখ ছিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ বুধবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার আসন ক্যাপাসিটি ১২ হাজার। ফলে এই ১২ হাজার পরীক্ষার্থীর পরে যারা থাকবে, তাদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হবে না। ভর্তিপরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতেই এ বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে একই নিয়মে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বুয়েটে।‘

জানতে চাইলে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদা নিলুফার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য প্রার্থী ১২ হাজার ১৪ জন। কিন্তু বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী ১২ হাজার আসনের সিট ক্যাপাসিটি থাকায় শেষের ১৪ জনকে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ও লেভেল এবং এ লেভেলের শিক্ষার্থী, তাদের মধ্য থেকে ১৩৮ জনকে রাখা হয়েছে। মোট ১২ হাজার ১৩৮ জন চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছে।  তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।‘ যারা পরীক্ষা দিতে পারছে না, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, গত বছর পরীক্ষায় বসতে মনোনীত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী হলেও প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে ১১ হাজার পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়।

ভর্তি পরীক্ষায় বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ঠিক থাকলেও পরীক্ষার আগেই বাছাইয়ে শিক্ষার্থী বাদ দেওয়া অমানবিক। কোনও কারণে একজন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে কোনও বিষয়ে খারাপ ফল করতেই পারে। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিলে চান্স পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারতো।

প্রার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলো এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ৯০০ টাকা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলো, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে এমন বাছাই প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে বৈষম্য দূর করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

বাদ পড়া ১৪ জনের মধ্যে থাকা বুয়েটে ভর্তিচ্ছু এক পরীক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি রীতিমতো বৈষম্য। কারণ পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা যারা এসএসসি ও এইচএসসিতে হয়তো একটু খারাপ ফল করেছি, তারা যদি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নেই, তাহলে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসিতে আমাদের চেয়ে ফল ভালো করা শিক্ষার্থীদের চেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় আমরা ফল ভালো করতাম। কিন্তু সে সুযোগ রাখাই হচ্ছে না। এটা অমানবিক। ‘

ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদ আবেদীন নামে এক অভিভাবক বাংলা ট্রিবিউনকে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা চাই এ ধরনের অনিয়ম, বৈষম্য দূর হোক। কারণ, যারা আসলেই মেধাবি, বুয়েট কর্তৃপক্ষের এমন পদ্ধতির কারণে বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন আগেই ভেঙে যাবে তাদের।’