ত্রিমুখী আন্দোলনে অচল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়


Md Abul Khayer Jayed | Published: 2024-07-03 19:40:32 BdST | Updated: 2024-07-06 10:53:21 BdST

শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা- কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)ক্যাম্পাস।ত্রিমুখী আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের সব একাডেমিক ক্লাস ও পরীক্ষা। এমনকি শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আন্দোলনে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বাসও।

গতকাল সোমবার থেকে বেরোবিতে ত্রিমুখী এ আন্দোলনের সূচনা হয়। বুধবারেও এ কর্মসূচি চলছে। কবে নাগাদ এটির অবসান হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। শিক্ষার্থীরা কবে ক্লাসে ফিরবেন, কবে শুরু হবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলো— তা বলার উপায় নেই। তবে, সরকার যদিও শিক্ষকদের দাবিকৃত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার করে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্বাভাবিক পাঠদান ও পরীক্ষা শুরু হবে। তবে, শিক্ষার্থীরা হয়তো কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে মাঠে আন্দোলনরত থাকবেন।

বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৪ জুন এবং ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মসূচি পালন করে।

সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার না করায় সোমবার (১ জুলাই) থেকে বেরোবিতে পূর্বঘোষিত সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও কর্মবিরতি শুরু করে। এ দিন সকাল থেকে সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন বেরোবি শিক্ষকরা। এ ছাড়া ৩০ জুন পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব ক্লাস ও পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকেই বেরোবি শিক্ষক সমিতির আহবানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা বলেন প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। তবে, শিক্ষকদের এ আন্দোলন পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথা সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, বৈষম্যমূলক এই পেনশন স্কীম জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা শুধু আমাদের আন্দোলন নয়, এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আন্দোলন।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, সরকার আমাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ সময় সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

এদিকে, হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল ‘যথাযথ’ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

তবে, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আযহার ছুটি শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে কোটা পুনর্বহাল বাতিলের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩ জুলাই) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কের মোড় সংলগ্ন ১নং গেটের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি

১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।

২. পরিপত্র বহাল-সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।

৩. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪.সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।

শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই না কোটা সম্পূর্ণ বাতিল হোক। কোটা থাকুক, তবে সেটা সামান্য। এই আইন করেই পরিপত্রটি পাস হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি

অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও কর্মবিরতির পর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ৩০ জুন থেকে তারা পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেন। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও তারা বিরত ছিলেন। গতকাল সোমবার তারা শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং কর্মবিরতি পালন করেন।