বুক রিভিও: বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ সা.


আলী হাসান ওসামা | Published: 2017-12-20 06:28:37 BdST | Updated: 2024-04-28 11:56:45 BdST

“আমি জানি না এই সফরে সফরকারীরা কীভাবে সময় কাটিয়েছেন। কী কী দর্শনীয় স্থান তারা দেখেছিলেন, তবে নিচের জিনিসগুলো দেখার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে: ......বিভিন্ন সমাজ ও ধর্ম: হিজাজের মূর্তিপূজারি, মদিনার ইহুদি গোষ্ঠী, লাখমিদ, বনু জুদহাম ও গাস্‌সানিদ গোত্রের খ্রিষ্টান আরব ও সন্ন্যাসীরা, যার মধ্যে একজন ছিল বাহিরা। ......সিরিয়া সফরের মাধ্যমে রাসূল ﷺ নিজে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানগুলো দেখেছেন। তাঁর চাচার সাথে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে নানান সংস্কৃতি, ভাষা ও প্রথার মুখোমুখী হয়েছেন। বাহিরা সন্ন্যাসীর সাথে দেখা হয়েছে। নিজের থেকে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের মেশা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিশোর-কিশোরীদের উন্মুখ হয়ে থাকা দরকার। যেগুলো তাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে সবসময় সেসব খুঁজা উচিত তাদের।” {পৃ. ৭৯-৮০}

বিজ্ঞ লেখক যদিও প্রথমে ধারণামূলক বাক্য ব্যবহার করে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, এ বিষয়ে তার সুনিশ্চিত জ্ঞান নেই। ‘আমি জানি না এই সফরে সফরকারীরা কীভাবে সময় কাটিয়েছেন। কী কী দর্শনীয় স্থান তারা দেখেছিলেন, তবে নিচের জিনিসগুলো দেখার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।’ কিন্তু দু-চার ছত্র পরেই কীভাবে যেনো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন, দ্ব্যর্থহীন শব্দে ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং এর থেকে টিনএজদের জন্য শিক্ষা বের করে আনলেন। “সিরিয়া সফরের মাধ্যমে রাসূল ﷺ নিজে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানগুলো দেখেছেন। তাঁর চাচার সাথে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে নানান সংস্কৃতি, ভাষা ও প্রথার মুখোমুখী হয়েছেন। বাহিরা সন্ন্যাসীর সাথে দেখা হয়েছে। নিজের থেকে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের মেশা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিশোর-কিশোরীদের উন্মুখ হয়ে থাকা দরকার। যেগুলো তাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে সবসময় সেসব খুঁজা উচিত তাদের।”

রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নবুওয়াতপূর্ব এ বিষয়টি উল্লেখ করার দ্বারা তিনি আমাদের উঠতি প্রজন্মকে বিভিন্ন ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষদের সাথে মেশার জন্য এবং তাদের সান্নিধ্য থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে শরিয়াহর ভিন্ন কোনো শিক্ষা আছে কি না—এ বিষয়টি দেখার কোনো প্রয়োজনীয়তা আদৌ তিনি অনুভব করলেন না। মুক্তমনা মুসলিম অনুবাদক হয়তো এর জন্য রেডিমেড অজুহাত দেবেন—“এটা ফিকহের বই নয়। এটাকে ফিকহ থেকে বেরিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে।” আমরা আমাদের জীবনকে কীভাবে গড়বো, কোন কোন জিনিস করবো আর কোন কোন জিনিস ছাড়বো—তাও ফিকহ ছাড়া আলাদা কিছু থেকে আমাদেরকে জানতে হবে বুঝি! আচ্ছা, সেই জিনিসটা কী? পাশ্চাত্যনীতি? হায়রে উর্বর মস্তিষ্ক! কাকে বলে ফিকহ আর ফিকহুস সিরাহ, কী তার প্রয়োগক্ষেত্র—এ বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা না নিয়েই এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে নাক গলালে তার পরিণতি এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিংবা অভূতপূর্ব নয়!
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
“তুমি মুমিন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হোয়ো না।” {সুনানুত তিরমিযি: ২৩৯৫; সুনানু আবি দাউদ: ৪৮৩২; সহিহ ইবনু হিব্বান: ২/৩১৪}
কারো সাথে মেশা, তার সঙ্গ ও সান্নিধ্য গ্রহণের মাপকাঠি হলো সে মুমিন হওয়া। আবু দাউদের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আওনুল মা‘বুদ’ থেকে এর ব্যাখ্যা লক্ষ করুন—“উদ্দেশ্য হলো কুফফার এবং মুনাফিকদের সঙ্গ গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। কারণ তাদের সঙ্গ দ্বীনের জন্য ক্ষতিকারক। সুতরাং হাদিসে ‘মুমিন’ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সমগ্র মুমিনজাতি।” একই ব্যাখ্যা ‘তুহফাতুল আহওয়াযি’তেও উল্লিখিত হয়েছে। এজন্যই শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) বলেন—
وأما مخالطته للكفار ، فليست العلة في منع مخالطة الكفار هي الخوف من الوقوع في الكفر فقط ، بل مِنْ أظهرِ عِلَلِ هذا الحكم : عداوتُهم لله ورسوله والمؤمنين ، وقد أشار الله تعالى إلى هذه العلة بقوله : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ ) الممتحنة/1 .
فكيف يليق بمسلم أن يصاحب عدو الله وعدوه ويصادقه ؟!
ثم مِنْ أين يأمَنُ هذا مِنِ استحسانِ طريقتهم ومذهبهم ؟ وقد وقع كثير من المسلمين في الكفر والإلحاد وارتدوا عن الإسلام بسبب مصاحبتهم للكفار ، وإقامتهم في بلدانهم . فبعضهم تَهَوَّدَ ، وبعضهم تَنَصَّر ، وبعضهم اعتنق مذاهب فلسفية ملحدة .
“কাফিরদের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করার কারণ এ নয় যে, কুফরে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা; বরং এই বিধানের অন্যতম সুস্পষ্ট কারণ হলো, আল্লাহ, তার রাসুল এবং মুমিনদের জন্য তাদের শত্রুতা।

আল্লাহ তাআলা নিজেই এই কারণের দিকে এ আয়াতের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেন—
“হে মুমিনরা, তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধু বানিও না যে, তাদের কাছে ভালোবাসার বার্তা পৌঁছাতে শুরু করবে, অথচ তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তারা তা এমনই প্রত্যাখ্যান করেছে যে, রাসুলকে এবং তোমাদেরকেও কেবল এই কারণেই বের করে দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছো।” (সুরা মুমতাহিনা : ১)
সুতরাং কোনো মুসলিমের জন্য কীভাবে সঙ্গত হবে আল্লাহ এবং তার শত্রুর সঙ্গ গ্রহণ করা এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়া?
এরপর কথা হলো, সে কীভাবে এ ব্যাপারে নির্ভয় হবে যে, সে তাদের মতাদর্শ এবং ধর্মকে দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে না? অনেক মুসলমান কাফিরদের সঙ্গ গ্রহণ করার কারণে এবং তাদের দেশে অবস্থানের কারণে কুফর এবং নাস্তিকতায় পতিত হয়েছে এবং ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে গেছে। তাদের কেউ ইহুদি হয়েছে, কেউ খ্রিষ্টান হয়েছে আর কেউ নাস্তিকতামূলক দার্শনিক মতাদর্শ গ্রহণ করেছে।”[1]

বি স্মার্টের লেখকের উদ্দেশ্য আরো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তার পরবর্তী পৃষ্ঠার ‘টেবিলের’ বক্তব্য থেকে—
“রাসূল ﷺ সিরিয়ায় সফর করেছিলেন। সেই কাফেলায় তিনি ছিলেন সবচেয়ে কমবয়স্ক।—নিজেকে নতুন রোমাঞ্চের সামনে উন্মোচিত করুন যা দেখেন তা দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করুন।” {পৃ. ৮১}

রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সিরিয়া সফর থেকে বিজ্ঞ লেখক যে শিক্ষা বের করলেন, তা অনেক মুসলিমের বিপথগামিতার পথ খুলে দিচ্ছে—তার জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে। আর প্রত্যেক মুসলিমই ভালো-মন্দ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীন নয়। প্রত্যেকের বিবেকও তাকে সৎ এবং উপযুক্ত নির্দেশনা দেয় না। এর জন্য প্রয়োজন ইলম এবং ফিকহের। প্রয়োজন আরো অনেক কিছু। লেখক বলেন—

“আপনার অভ্যন্তরীন ভয়েস ও বিবেক আপনাকে বলে দিক কোনটা খারাপ কোনটা ভালো। আস্থাভাজন থাকুন। এমনকি যদি বাবা-মা বা অন্য জ্ঞানী কারও তত্ত্বাবধান থেকে দূরে থাকুন তবুও।” {পৃ. ৮১} হাঁ, এই আভ্যন্তরীণ ভয়েসই অনেককে বিভ্রান্ত করতে পারে সহজেই।

 

এমএসএল