প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ হলেও রক্ষা করা কঠিন। আমরা অন্যদের কাছে, এমনকি নিজের কাছেও প্রায়ই অঙ্গীকার করি। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সবসময় সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারি? যখন রাখতে পারি না, তখন অন্যের সামনে কিন্তু নিজের মূল্য হারাই। সম্পর্কের আস্থার জায়গাটা ক্ষয় হতে থাকে।
একটা মানুষ কেমন তা নির্ধারণ করা হয় তার কথায়, তার কর্মে। ছোট থেকে আমরা বিষয়টি জানলেও ঠিক কতটুকু মানি? একটি সুন্দর সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে কথা রাখার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অসীম। আপাতদৃষ্টিতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা খুব বড় কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। তবে যদি কথা দিয়ে কথা না রাখেন বা আপনার অবস্থান থেকে নিষ্ক্রিয় থাকেন তাহলে আপনি যাকে কথা দিয়েছেন তাকে এই বার্তা দেওয়া হয় যে, 'আপনার কোনো গুরুত্ব আমার কাছে নেই'। প্রতিশ্রুতি না রাখা নিজেকে অসম্মান করার সমান। এটি আমাদের আত্মসম্মান এবং আমাদের জীবনের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কথা দিয়ে কথা রাখার মাধ্যমে যাকে কথা দিয়েছেন তাকে সম্মান করা হয়। যদি কেউ দীর্ঘ সময় ধরে কথা দিয়ে কথা না রাখেন অথবা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন তবে ব্যক্তি নিজের কথার গ্রহণযোগ্যতা হারান। অপরদিকে যারা কথা দিয়ে কথা রাখেন তাদের প্রতি অন্যের সম্মান ও শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আসলেই এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারব কি না। কাউকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে অবশ্যই নিজের সামর্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। যদি না বুঝতে পারেন যে কথাটা রাখতে পারবেন কি না, তাহলে কাউকে প্রতিশ্রুতি না দেওয়াই ভালো। মানুষ সততাকে সম্মান করে এবং মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলে।
পরিবার শিশুর জন্য বিদ্যালয় এবং বাবা-মা সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিশুদের শেখাতে হবে, কথা দিয়ে কথা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদেরকে যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তাহলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। তারা সেখান থেকেই শিখবে।
কর্মজীবনেও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে ধরা হয় একটি বড় গুণ। সেখানে যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন তাহলে নিজের ক্যারিয়ারের মতো প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়। প্রতিষ্ঠানে আপনি একজন অবিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে হলে হয়তো আইনি কোনো জটিলতার সম্মুখীন নাও হতে পারেন, কিন্তু এটি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা। তাই আত্মিক উন্নয়নের জন্য কথা দিয়ে কথা রাখার অভ্যাস আয়ত্ত করা জরুরি।