জামায়াত নেতা রাজ্জাকের পদত্যাগ, আসছে ‘ইসলামিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি’


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2019-02-16 03:02:02 BdST | Updated: 2024-06-26 08:13:41 BdST

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। দলের আমির মকবুল আহমদকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে রাজ্জাক তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে মূলত তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির ভূমিকাকেই।

তিনি বলেছেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছেন যাতে একাত্তরের ভূমিকার কারণে দলটি জাতির কাছে ক্ষমা চায়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

এ ছাড়া পদত্যাগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি, কিন্তু সে দাবি অনুযায়ী জামায়াত নিজেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারেনি।

চিঠিতে রাজ্জাক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজও দলের নেতৃবৃন্দ ৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেনি। এমনকি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেনি।’

তিনি বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে ভুল স্বীকার করে জাতির সঙ্গে সে সময়ের নেতাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে’।

আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডন যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সে সময়ে আটক থাকা জামায়াত নেতাদের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে বলেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত এবং ওই সময়ে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

তার মতে, জামায়াত ৬০-এর দশকে সব সংগ্রামে যেমন অংশ নিয়েছে, তেমনি ৮০-র দশকে আট দল, সাত দল ও পাঁচ দলের সঙ্গে যুগপৎভাবে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।

রাজ্জাক তার পদত্যাগ পত্রে বলেন, ‘কিন্তু দলটির এসব অসামান্য অবদান ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা পরবর্তীকালে জামায়াতের সব সাফল্য ও অর্জন ম্লান করে দিয়েছে’।

abdur-razzak
.
abdur-razzak
.

তিনি জানান, ২০০১ সালে জামায়াতের সে সময়ের আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী হওয়ার পর বিজয় দিবসের আগেই ১৯৭১ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন একটি কমিটি এবং বক্তব্যের খসড়াও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ ছাড়া, ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকেও তিনি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়েও তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে ২০১১ সালে মজলিসে শুরার সর্বশেষ প্রকাশ্য অধিবেশনেও তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন, কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের অবহেলায় তার প্রস্তাব পরাজিত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এরপরে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বর্তমান আমির মকবুল আহমদকেও চিঠি পাঠিয়ে ১৯৭১ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেয়ার প্রস্তাব দেন আব্দুর রাজ্জাক।

মকবুল আহমদ আমির হওয়ার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মতামত চাইলে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি খসড়া বক্তব্য পাঠান, কিন্তু সেটিও আর বাস্তবায়িত হয়নি।

রাজ্জাক বলেন, ‘সর্বশেষে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতের করণীয় সম্পর্কে আমার মতামত চাওয়া হয়। আমি যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেই। অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম, জামায়াত বিলুপ্ত করে দিন’।

‘কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমার তিন দশকের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে,’ - বলেন আব্দুর রাজ্জাক।

তার পদত্যাগপত্রে তিনি বৈশ্বিক রাজনীতির বাস্তবতা ও একাত্তরে দলের ভূমিকা নিয়ে বর্তমানে যে প্রভাব, তা তুলে ধরেছেন দলের আমিরের কাছে।

তিনি বলেন যে, জামায়াতে যোগ দেয়ার পর তিনি দলের ভেতর থেকে সংস্কারের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

‘বিগত ৩০ বছর আমি সেই চেষ্টাই করেছি। আমি কাঠামোগত সংস্কার ও নারীর কার্যকর অংশগ্রহণের পক্ষে ছিলাম। ২০১৬ সালে চিঠি দিয়ে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। অন্য মুসলিম দেশগুলোর উদাহরণ দিয়েছি। কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি’।

নতুন দল ‘ইসলামিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি’ নিয়ে কানাঘুষা
 
রাজনীতির মাঠে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আসছে খুব শিগগির। দলটির নাম ‘ইসলামিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি’ (আইপিপি)। দলটির নেতৃত্ব ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে এরই মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামি মার্চে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারে। মার্চে সম্ভব না হলে তারা জুনকে টার্গেট করে এগুবে। গত ৫ বছর ধরে চলেছে তাদের প্রস্তুতি পর্ব। গঠনতন্ত্র তৈরী, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণসহ ইতোমধ্যে নানা ধরনের কর্মকৌশল ও পন্থা তৈরী করেছে দলটির নীতি নির্ধারকরা। আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পরপরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে তারা। নির্বাচন কমিশনে সফল না হলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে আইপিপি।

নিবন্ধন বাতিল হওয়া একটি ইসলামিক রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের আশির দশকের কয়েকজন ছাত্রনেতা দলটির মূল উদ্যোক্তা।

তুরস্কের একে পার্টির আদলে আইপিপি’র কার্যক্রম ও কর্মপন্থা তৈরী হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন সমন্বয়ক।

এদিকে, নিরবে নিভৃতে ৫ বছর ধরে পরিকল্পনা করে একটি ইসলামি দলের আত্মপ্রকাশের পেছনে কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে।

সংবাদ সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪ ডট কম এবং চেঞ্জটিভি ডট প্রেসে