উপাচার্যের প্রতি নানা অভিযোগ এনে কুবি শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন


Al Shahriar | Published: 2024-06-23 23:01:58 BdST | Updated: 2024-06-28 11:15:44 BdST

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার অভিযোগে আবারো সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। রোববার (২৩ জুন) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের সঞ্চালনা ও অধ্যাপক ড. আবু তাহেরের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত শিক্ষক লাউঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের চার পাতার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঘটা ঘটনাগুলোর জন্য উপাচার্যকে দায়ী করা হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিয়োগের শর্ত কমিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার। এই উপাচার্যের সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিয়ম মেনে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির ভাষ্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত 'অবৈধ' ডিন ও চেয়ারম্যানরা নিয়োগ বোর্ডে বসে নিয়োগ দিলে সেই নিয়োগও অবৈধ হবে।

পাশাপাশি শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কুবি শিক্ষক সমিতি তাদের সাধারণ সভায় চারটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেই সিদ্ধান্তগুলোও পাঠ করে শোনান অধ্যাপক ড. তাহের। সিদ্ধান্তগুলো হলো- রোববার (২৩ জুন) থেকে শ্রেণি কার্যক্রম চললেও বেলা ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি চলবে; শিক্ষকদের দাবী পূরণ না হাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন; নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরনের ক্ষেত্রে বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুন নিয়োগ বন্ধ করা এবং সর্বশেষ ২০ জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষকদের দাবীসমূহ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে পূর্বের মতো আন্দোলনে যাবে শিক্ষক সমিতি।

এই সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের সাথে সাক্ষাতে যায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার ব্যাপারে। সেখানে তাদের দাবির মুখে সোমবারের (২৪ জুন) তিনটি বিভাগের( ইংরেজি, পরিসংখ্যান, পদার্থবিজ্ঞান) এবং বৃহস্পতিবারে (২৭ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।

নিয়োগ স্থগিতের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'শিক্ষক সমিতির দাবি অযৌক্তিক। এই নিয়োগগুলো ৩০ জুনের মধ্যে না দিতে পারলে পদগুলো চলে যাবে। তখন আবার শিক্ষক সংকট নিরসন হবে না। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো স্থগিত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। তবুও আমি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের এই অযৌক্তিক দাবি মানতে বাধ্য হলাম। আশা করি খুব দ্রুতই নিয়োগ পরীক্ষাগুলো নিতে পারবো।'

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, 'নতুন নিয়োগ বন্ধ করার দাবির পেছনে অনেকগুলো প্রেক্ষাপট আছে। এখানে যেসব নিয়োগ কার্যক্রম হচ্ছে সেগুলোর কিছু অভিন্ন নীতিমালা পাশ হওয়ার আগে হয়েছে। সেখানে তো অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের কোন কারণ নেই। এছাড়া অভিন্ন নীতিমালাও তিনি নিজ ক্ষমতাবলে পাশ করিয়েছেন। উনি যদি আলোচনার মাধ্যমে এসব সমাধান করেন তাহলে আমরা মানবো। এছাড়া অবৈধ ডিন, চেয়ারম্যানের বিষয় তো আছেই।'

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'আমরা দুই বছরে মাননীয় উপাচার্যের যে কার্যকলাপ দেখেছি, ওনার উপর আর আস্থা রাখতে পারছি না। কাজেই ওনি আমাদের দাবিগুলো সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে দেখাক, তারপরে ওনি নিয়োগ কার্যক্রমে হাত দেক আমাদের কোনো আপত্তি নাই। যত তাড়াতাড়ি আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে তত তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের কর্মসূচি থেকে সরে যাবো।'

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, 'তিনি (উপাচার্য) এখানে কিছু কমিটি কমিটি খেলছেন। একটার পর একটা কমিটি করেন। ১৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় যে কমিটি হয়েছে, আমরা আস্থা রেখেছিলাম। সেই কমিটি মাত্র দুই দিনে তড়িঘড়ি করে রিপোর্ট দিয়েছে। সেই কমিটি যদি সমাধান করতো তাহলে আরও ৭/৮ টা কমিটি করা লাগতো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উপাচার্য ক্লাস পরীক্ষার দিকে মনোনিবেশ করেন এখন। যে সমস্যাগুলো আপনি তৈরি করেছেন সেগুলো আগে সমাধান করেন। তাপরে আমরা সবাই মিলে দেখবো বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মিলিতভাবে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। যদি ২০ জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করা হয় আমরা সাধারণ সভা ডেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে পারি।'