টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ সমাবেশ


Dhaka | Published: 2020-11-02 20:04:46 BdST | Updated: 2024-05-08 16:56:23 BdST

আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে টাঙ্গাইলের বাসাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ খানকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

আরোও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান রাজু, রোমান হোসেন, শোয়েব হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হামজা রহমান অন্তর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হাসানসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বক্তব্যে বলেন, "গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের বাসাইলে সালিশ বৈঠকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ খানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও গলাটিপে হত্যা করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। যে জাতি তার স্বাধীনতা আন্দোলনের বীরদের সম্মান দিতে জানে না, সেই জাতি কখনোই সফলকাম হতে পারে না। টাঙ্গাইলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করাই প্রমাণ করে সমগ্র দেশে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি দ্বারা কিভাবে প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হত্যা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা, নির্যাতন হচ্ছে যা কখনোই কাম্য নয়। পূর্বের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে কখনোই এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না বলে আমরা মনে করি।"

আল মামুন আরোও বলেন, "যদি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন থাকতো, তাহলে আজ আমাদেরকে এরকম হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলো কখনোই দেখতো হতো না। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসররাই সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হয়রানী করে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকাণ্ডের দায়ভার রাষ্ট্রকেও নিতে হবে। কারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, রাষ্ট্রকে লাল-সবুজের পতাকা উপহার দিয়েছেন। টাঙ্গাইলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুককে হত্যা করা হয়েছে, টাঙ্গাইল হাসপাতালে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, ঘাটাইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক চাঁদার দাবিতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা করা হয়েছে। একের পর এক এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর জন্য টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। টাঙ্গাইল প্রশাসন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের আহবান, অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করুন। টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাজাহানের উপস্থিতিতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যার মদদদাতা ইউপি মেম্বারকেও গ্রেফতার করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, হামলা, নির্যাতনের ধারাবাহিক ঘটনাগুলোর কারণ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।অন্যথায় সমগ্র দেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। আগামী ২৪ ঘন্টা মধ্যে সকল আসামীকে গ্রেফতার না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।"

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর তিন (৩) দফা দাবি:

১। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ খানের সকল হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাজহানকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে টাঙ্গাইলে বারবার বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, হামলা, নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনাগুলোর প্রকৃত কারণ জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।

৩। টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪। সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা, হয়রানী, নির্যাতন বন্ধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।