শিক্ষা সনদের বৈধতা নেই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের


Desk report | Published: 2022-04-12 08:35:07 BdST | Updated: 2024-05-08 04:31:10 BdST

তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিগগিরই এই বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেবে উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্ব থাকা সংস্থাটি। ইউজিসি বলছে, ওই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনানুযায়ী বৈধ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা, ফলাফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। ইউজিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ যাচাইয়ের জন্য তাঁদের কাছে অনেকেই আসছেন। এ জন্যই এই সতর্কতা জারি করা হচ্ছে।

ইউজিসি বলছে, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইবাইস ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আদালতে একাধিক মামলা চলছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এমনকি কোনো পদেই আইনানুযায়ী বৈধভাবে কেউ নিয়োজিত নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষাক্রমও মেয়াদোত্তীর্ণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা এবং এর ফলাফল ও একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে ইউজিসি বলছে, সাময়িক অনুমতিপত্রের শর্তাবলি প্রতিপালন এবং গুণগত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে ওই বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষে রায় দেন। ইউজিসি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

অনুমোদনকালীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা ছিল রাজধানীর বনানীর ৩৫ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে। পরে অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পত্রে বারিধারা-নদ্দা এলাকার ৫৪/১ প্রগতি সরণির ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ইউজিসি এই ঠিকানা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পায়, সেখানে আইনানুযায়ী জায়গা (ফ্লোর স্পেস), শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষাক্রমও মেয়াদোত্তীর্ণ। বৈধ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা, ফলাফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।


দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে সরকারের অনুমোদন পায়। কিন্তু আইন না মানায় ২০০৬ সালে সরকার এটি বন্ধ করে দেয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত ঠিকানা ছিল কুমিল্লায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন সরকারের বন্ধ ঘোষণার আদেশের বিরুদ্ধে রিট করলে তারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পায়। তখন ঠিকানা নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনপত্রে উল্লিখিত (১৫, ছায়া বাড়ি ভবন, রোড-৩১, সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা) ঠিকানায় পরিদর্শনের জন্য ইউজিসিকে বলে। ইউজিসি এই ঠিকানায় পরিদর্শনের জন্য চিঠি পাঠালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই পরিদর্শনপত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে আবার আদালতে রিট করে। এই রিটের আলোকে ইউজিসির ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৭টি প্রোগ্রাম এবং ওই ঠিকানা আপলোড করা হয়।

পরবর্তী সময়ে আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি এবং আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানা হিসেবে উত্তরার ৯/বি পলওয়েল কারনেশনকে ইউজিসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। কিন্তু ইউজিসি সরেজমিনে গিয়ে ওই ঠিকানায় (৯/বি পলওয়েল কারনেশন) দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার কোনো অস্তিত্ব পায়নি। বর্তমানে ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে ইউজিসি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগও আছে। অথচ ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে এখনো কোনো অনুমোদন দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা এবং এর ফলাফল ও একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।