ঢাবিতে ট্যালেন্ট হান্টের পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন আসিফ


ঢাবি টাইমস | Published: 2019-11-08 02:59:56 BdST | Updated: 2024-05-07 03:42:09 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট-২০১৯’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) কর্তৃক আয়োজিত, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১ নভেম্বর ‘সঙ্গীত’ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এই ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। পূর্ব নির্ধারিত দিন এবং সময় অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলগুলোতেও ৭টি বিষয়ে এই প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা রয়েছে।

ইতিমধ্যেই, ঢাবির ৬টি আবাসিক হলে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় দীর্ঘকাল পরে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সাথে অংশগ্রহণ করলেও ‘পূর্ব ঘোষিত’ পুরস্কার প্রদান না করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট -২০১৯’ সালের প্রচারণী পোস্টারে পুরস্কারের বিষয়ে বলা হয়েছে “প্রতিটি বিষয় থেকে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীকে হল পর্যায়ে বই, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে”।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, পোস্টারে বই, ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেটের কথা উল্লেখ থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র একটি ‘মগ’ এবং ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে। আবার, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী অনেক শিক্ষার্থী বলেছেন তাদের সাথে পুরস্কারের নামে প্রতারণা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় একক অভিনয়ে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী হয়েছি। আমাকে পুরস্কার হিসেবে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। অথচ, পোস্টরে বই এবং ক্রেস্টের উল্লেখ থাকলেও আমাকে তা দেওয়া হয়নি। এটা খুবই বিব্রতকর।

ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় হল পর্যায়ে একক আবৃত্তিতে প্রথম হওয়া এক শিক্ষর্থী বলেন, আমি জানতামই না যে পোস্টারে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও বইয়েরও কথা রয়েছে। পরবর্তীতে পোস্টার দেখে নিশ্চিত হলাম কিন্তু আমাকে শুধু একটি সার্টিফিকেট আর মগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ’র (ডাকসু) সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট ২০১৯ সালের প্রধান সমন্বয়ক আসিফ তালুকদার বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে কোনো স্পন্সার ছাড়া আমাদের নিজস্ব বাজেটেই এতো বড় পরিসরে এই প্রগ্রামটির আয়োজন করা হয়। কোনো ধরনের স্পন্সার ছাড়া আয়োজন করার কারনে প্রথমে দিকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ১৮টি হলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে ৩৭৮ জন অংশগ্রহণকারিকে ক্রেস্ট এবং বই উপহার দেওয়ার মত আর্থিক ফান্ড আমাদের নেই।

এ বিষয়ে ডাকসু’র সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট ২০১৯ সালের আরেকজন সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ ইচ্ছে আছে সব পুরস্কারই দেওয়ার কিন্তু যথেষ্ট বাজেট এবং স্পন্সর না থাকায় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পোস্টেরগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়েছে বিধায় পুরস্কারের বিষয়টি সেভাবে লক্ষ্য করা সম্ভব হয়নি। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমারা পুরস্কার হিসেবে উপহার এবং ক্রেস্টের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম।

এদিকে বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন আসিফ তালুকদার। তবে তার আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট- ২০১৯ এর হল পর্যায়ে আপনাদের সামগ্রিক সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা কৃতজ্ঞ৷ ইতিবাচক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলে আমাদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন গড়া সাপেক্ষে অসাম্প্রদায়িক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মানের তাড়না থেকে আমাদের এই আয়োজন আপনাদের জন্য৷ হলের প্রতিটি রুমে আপনাদের জন্য যে লিফলেট দেওয়া হয়েছিল সেখানে উল্লেখ ছিল যে হল পর্যায়ে যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হবেন তাদের ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, বই দিয়ে আমরা পুরষ্কৃত করবো। অতি-স্বল্প সময়ে আমাদের আয়োজনের কারণে আমরা ক্রেস্ট ও বই ব্যবস্থা করতে পারিনি৷ এবং হল পর্যায়ে আমরা আয়োজন শুরু করার আগে তা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিক বন্ধুদের অবহিত করেছি৷ আমাদের সামর্থের মাঝে সবটুকুন মূল্যায়ন করার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি নেই বলে আপনাদের নিশ্চিত করছি৷ এরপরও একজন সাংবাদিক ফোন যোগে বললেন কয়েকজন ছাত্রী বন্ধু নাকি সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন যে কেন ক্রেস্ট আর বই না দিয়ে শুচেচ্ছা উপহার হিসবে প্রিন্টিন্টেড মগ দেওয়া হচ্ছে৷ লক্ষ করলাম ইতোমধ্যে একটি অনলাইন মিডিয়াতে একটা নেতিবাচক নিউজও করা হয়েছে এটি নিয়ে যা আমাদের অত্যন্ত ব্যথিত করেছে৷ আমাদের আয়োজন নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন বা অভিযোগ থাকলে দয়াকরে সাংবাদিক বন্ধুদের জানানোর আগে আমাদের জানানোর বিনীত অনুরোধ করছি৷ আপনাদের জন্য আমাদের এই আয়োজনের যে কোন বিষয়ে আপনাদের কৈফিয়ত দিতে আমরা বাধ্য থাকবো৷ এরপরও যদি আমাদের ব্যাখ্যা আপনাদের মনপুত না হয় সেক্ষেত্রে আপনারা যে ধরনের পদক্ষেপ নিবেন আমরা তা মাথা পেতে নিতে নিবো।

ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আমাদেরও আপনাদের মতন ভালো লাগা- খারাপ লাগা কাজ করে৷ আমরা যদি হল পর্যায়ে সর্বোচ্চ পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে আমাদেরও ভালো লাগতো৷ আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে উক্ত আয়োজন সফল করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান রইলো৷