খাতা না দেখেও সম্মানী ব্যয় এক কোটি টাকা


Rajshahi | Published: 2020-02-11 06:43:14 BdST | Updated: 2024-05-11 15:24:55 BdST

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় খাতা না দেখেও সম্মানী ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে খাতা প্রস্তুত, ইনভিজিলেটর, পরীক্ষা কমিটির নির্ধারিত ব্যয়, খাতা দেখার ব্যয়ের পর উদ্বৃত্ত অর্থ শিক্ষকদের মাঝে ভাগ করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

যদিও কাজ না করে সম্মানী আর এভাবে অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ শিক্ষকরাই। ভর্তি পরীক্ষার ব্যয় নিয়ে আপত্তিও রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। এরই মধ্যে ঘটল এমন ঘটনা।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মোট চূড়ান্ত আবেদনকারী ছিলেন ৭৮ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৩১ হাজার ১২৯ জন, ‘বি’ ইউনিটে ১৫ হাজার ৭৩২ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩১ হাজার ২২৯ জন ভর্তিচ্ছু চূড়ান্ত আবেদন করেন। শিক্ষার্থী প্রতি আবেদন ফি ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয় ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৮ হাজার টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতর সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষার মোট আয় থেকে ৪০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা হওয়ার পর বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ প্রশ্ন, উত্তরপত্র তৈরি, পরিদর্শক ফিসহ ২৩টি খাতে ব্যয় হয়। সব ব্যয়ের পর উদ্বৃত্ত অর্থ শিক্ষকদের মাঝে ভাগাভাগি হয়। গত কয়েক বছর ধরেই এভাবে ভাগাভাগি হয়ে আসছে ভর্তি পরীক্ষার কোটি কোটি টাকা।

এ বছর ‘বিজ্ঞান, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান, প্রকৌশল, কৃষি অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটে মোট ৫১৮ জন শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে অংশ নেন। খাতা দেখা, নম্বর যোগ করা এবং কমিটির দায়িত্ব পালন করে মোট ১৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন একেকজন শিক্ষক। যার মধ্যে আট হাজার টাকা খাতা দেখার সম্মানী। দুই হাজার টাকা কমিটিতে দায়িত্ব পালনের জন্য। আর বাকি পাঁচ হাজার টাকা উদ্বৃত অর্থের ভাগ। সেই হিসেবে কাজ না করলেও সম্মানী ব্যয় ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

কলা, চারুকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটভুক্ত ‘এ’ ইউনিটে এ অর্থ বেড়ে শিক্ষক প্রতি কাজ ছাড়া নয় হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এ বছর এই অনুষদে চার শতাধিক শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই হিসাবে ‘এ’ ইউনিটে কাজ অতিরিক্ত সম্মানী ব্যয় ৩৬ লাখ টাকা।

ব্যবসায় শিক্ষা ও ব্যবসায় প্রশাসনভুক্ত ‘বি’ ইউনিটে এ অর্থের পরিমাণ বেড়ে শিক্ষক প্রতি ৩০ হাজার। এ বছর শতাধিক শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে ছিলেন। সেই হিসাবে ‘বি’ ইউনিটে কাজ অতিরিক্ত সম্মানী ব্যয় ৩০ লাখ টাকা।

এছাড়া কো-অর্ডিনেটর প্রতি ৪০ হাজার, বিভাগীয় সভাপতিরা পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা করে। এভাবে তিন ইউনিট মিলে কাজের বাইরে সম্মানী ব্যয় এক কোটি টাকা।

‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. একরামুল হামিদ ও ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কো- অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. আহসান কবীর জানান, ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষকদের মাঝে সমানভাবে ভাগ করা হয়েছে। এর আগেও একই নিয়ম ছিল। এর আগে শিক্ষক প্রতি ৪০ হাজারের বেশি টাকাও পেয়েছেন।

এদিকে অতিরিক্ত অর্থ ভাগাভাগি না হলে ভর্তি ফরমের দাম আরও কমানো যেত বলে দাবি শিক্ষকদের। এ প্রসঙ্গে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, নামে-বেনামে অযৌক্তিক ব্যয় বাড়ার কারণে ভর্তি ফরমের দাম বেড়ে যায়। একদিকে শিক্ষার্থীদের কষ্ট বাড়ে অন্যদিকে কাজ না করেও শিক্ষকদের এ অর্থ ভাগাভাগি হয়। যা নীতিগতভাবে অনেকে মেনে নিতে পারেন না।

বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতিরিক্ত এই আয় কোনো খাতে উল্লেখ করা হয় না। যে কারণে এই আয় নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। আয়ের ট্যাক্স বা যাকাত দেয়াও হয় না।

এর আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অর্থ ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা নজরে এসেছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অডিট বিভাগের। এ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই অডিট আপত্তি দিয়েছেন তারা। আপত্তি রয়েছে ব্যয়ের ভাউচার নিয়েও। ২০১২-১৩ নিরীক্ষা বছরে নিরীক্ষার অনুচ্ছেদ ৫ এ আপত্তি ছিল, ভর্তি ফরম বিক্রয় লব্ধ ৭০ শতাংশ পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার ৭৫ টাকা ব্যয় সপক্ষে বিল-ভাউচার অডিটে উপস্থাপন করা হয়নি।

তবে এসব অর্থ অডিটেবল কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট সেল প্রধান নিয়ামুল হক।

কাজ না করেও সম্মানী পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক আফসার আলী বলেন, লোকবল সংকটের কারণে অর্থ ও হিসাব দফতর থেকে পুরো অর্থের ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না। তাই নিয়ম অনুযায়ী ৬০ শতাংশ অর্থ অনুষদগুলোকে দিয়ে দেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার ব্যয়ের যেসব খাত রয়েছে সেই অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা হয়।