ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক রুমে থাকতে হয় ৩০-৪০ জন!


ঢাবি টাইমস | Published: 2017-08-21 23:39:15 BdST | Updated: 2024-09-19 22:05:32 BdST

ছোটবেলা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস,সংগ্রাম,ঐতিহ্যের কথা শুনে বড় হয়েছে সৈকত। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার স্বপ্ন সেইসময় থেকেই। ভালোভাবে পড়াশুনা করায় স্বপ্ন একসময় সত্যি হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও আবাসন সংকটের মুখে তা হয়ে পড়ে দুস্বপ্নের মতো।

নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সৈকত। ঢাকায় থাকার মতো কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। মেসের ভাড়া অনেক, যা তাঁর এবং তাঁর পরিবারের কোনোভাবেই বহন করা সম্ভব নয়। আবাসন সংকট থাকায় হলের এক বড় ভাইকে ধরে গণরুমে উঠে সে। কিন্তু রুমটি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট হওয়ায় সারাদিন তাঁকে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতে হয়। পড়াশুনা মোটেই হচ্ছে না। পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়।

শুধুমাত্র সৈকত একাই গণরুমের ভোগান্তি ভোগ করছে না। সৈকতের মতো প্রথম বর্ষে পড়তে আসা বেশিরভাগ ছাত্রকেই এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ হল প্রশাসনের হাতে নেই। বহিরাগত অনেকে হলে সিঙ্গল রুম নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটালেও বৈধ ছাত্রদের অনেককেই গণরুম বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়।

প্রথমদিকে গণরুমে উঠলেও কিছু ছাত্র খুব তাড়াতাড়িই অন্য রুম পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমন অনেক ছাত্রও আছে যাদের পড়াশুনা শেষপর্যায়ে থাকলেও এখনো রয়েছেন গণরুমে। এর কারণ কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সাধারণত প্রথম বর্ষে ওঠার কোনো নিয়ম নেই। ক্যাম্পাসের পাশাপাশি হওয়ায় এবং বিদ্যুৎ ও পানির সার্বক্ষণিক সুবিধা থাকায় প্রথম বর্ষেই হলের গণরুমে উঠি। কিন্তু এমন সুবিধা কাজে লাগাতে যেয়ে প্রথম বছরই গণরুম থেকে আমার ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায়।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের গণরুমের এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য হলে তবুও রুমের ভেতর গণরুম কিন্তু আমাদের থাকতে হয় গণরুমের বারান্দায়। অনেক সময় বেশি বৃষ্টি হলে ভিজে যেতে হয়। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠতে যে কী কষ্ট লাগে তা বলে বোঝানো যাবে না। আর শীতের দিনের ভোগান্তি তো রয়েছেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রত্যেক দিন সকালে ক্লাস থাকে। সারাদিন ক্লাস করে অধিকাংশ ছাত্রই বিকালে টিউশনি করতে যায়। তাই সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাতে তাদের একটু ভালো ঘুমের দরকার হয়। কিন্তু গণরুমে থাকায় গরম, মশা ও ছাড়পোকার কামড়ে তাঁরা রাতে ঘুমাতে পারেনা। তাই রাতের পর রাত থাকতে হয় নির্ঘুম অবস্থায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই আছে গণরুম বিড়ম্বনা। অনেক ছাত্র হলে উঠে এই বিড়ম্বনা সইতে না পেরে হল ছেড়ে চলে গেছেন। এ সম্পর্কে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বললেন, হলে থাকার খুবই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভালো রুম না পাওয়ায় থাকা হলো না। বৈধভাবে রুম পেলে আবার হলে ওঠার ইচ্ছা আছে।

হলগুলোর গণরুম সাধারণত স্বাভাবিক রুমের চেয়ে বড় হয়ে থাকে। একটি রুমে ২৫-৪০ জন পর্যন্ত ছাত্র থাকে। এত ছাত্র থাকার পর ওই রুমটাকে আর বড় মনে হয় না। এ সম্পর্কে জহুরুল হক হলের রনি নামে একজন ছাত্র বললেন, আমাদের রুমে কোনো খাট নেই। ফ্লোরের উপর একটির পর একটি তোশক পেতে ছাত্ররা শুয়ে থাকে। শোয়ার ব্যবস্থা ঘিঞ্ঝি হওয়ায় রাতে প্রচুর গরম লাগে। তাই মাঝে মাঝে হলের ছাদে গিয়ে ঘুমাই।

গণরুমগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস, বই,ব্যাগ,পোশাক ইত্যাদি রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক সময় প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস চুরি হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়। ঘিঞ্ঝি হওয়ায় মশারিও অনেকাংশে ব্যবহার করার জায়গা থাকে না। তাই রাতভর মশার কামড়ে ঘুমাতে পারে না ছাত্ররা। এর ওপর বাড়তি হিসিবে আছে ছারপোকা। অনেকে তাই না ঘুমিয়ে ঘরের জানালা দিয়ে অপেক্ষা করে রাত পোহানোর। রাতের ঘুম সকালে পূরণ করার ব্যর্থ চেষ্টা থাকে তাঁদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই গণরুমে বসবাসকারী এই ছাত্রদের বসবাসের মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিলে তাদের সামনের দিনের পথচলা সহজ হবে।

বাংলা ইনসাইডার

এমএসএল