ভর্তি ফরম বিক্রির অর্থ ব্যয়নীতি মানছে না ঢাবির অনুষদগুলো

অনুষদগুলোর সেচ্ছাচারিতায় ভর্তি ফরম বিক্রির অর্থ পায়না বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2017-08-22 22:00:38 BdST | Updated: 2024-09-19 22:25:15 BdST

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ আয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনুষদগুলো এ অর্থ ব্যয়নীতি মানছে না। ভর্তি ফরম বিক্রির কিছু টাকা কোষাগারে জমা দিলেও তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অনেক কম। এদিকে ভর্তি ফরম বিক্রির এ আয়কে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরে মূল বরাদ্দ থেকে কেটে রাখছে বড় অঙ্কের টাকা।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ফরম বিক্রি বাবদ টাকার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, কলা অনুষদ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ২০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দিয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান অনুষদ ১৫ শতাংশ এবং চারুকলা অনুষদ ১০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ আট কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা আয় হয়েছে। পাঁচটি অনুষদে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৩টি ভর্তি ফরম বিক্রি করে এ টাকা আয় করা হয়। ছয় হাজার ৯১১টি আসনের বিপরীতে এ ভর্তি ফরম বিক্রি হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন তহবিলে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যরা মানলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা মানছে না। এক্ষেত্রে তারা নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলছে। তবে আমরা চাই অন্যদের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এ নির্দেশনা মানুক। এজন্য ইউজিসির পক্ষ থেকে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং অডিট আপত্তিও জানানো হয়েছে।

অনুষদপ্রধানরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষার আনুষঙ্গিক খরচ বাড়া ও ভর্তি ফরমের দাম বৃদ্ধি না করায় ইউজিসি নির্ধারিত এ নিয়ম মানা কঠিন হচ্ছে। এছাড়া এসব টাকার ১০ শতাংশ সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। কয়েকজন অনুষদপ্রধান এ সমস্যা উত্তরণের জন্য ভর্তি ফরমের দাম বাড়ানো উচিত বলেও মনে করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান বিভাগের ডিন ও ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ভর্তি পরীক্ষার খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা ২০ শতাংশের বেশি অর্থ জমা দিতে পারেন না। গত কয়েক বছর ধরে ভর্তি ফরমের দাম বাড়ানো হয়নি বলে অতিরিক্ত খরচ বহন করার পর বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে ৪০ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়া অসম্ভব। যদি ভর্তি ফরমের দাম বাড়ানো হয় তখন ৪০ শতাংশ অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ইউজিসি তো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মাথায় রেখেই এ নির্দেশনা দেয়। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভর্তি পরীক্ষার ফরম বাবদ নেয় না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে অনুষদগুলোর ডিনদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন, কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়নি। ফি বাবদ আয়কৃত টাকা ভর্তিকাজে খরচ হয়ে যাওয়ায় তহবিলে টাকা জমা দিতে পারছে না। আমরা সবসময় চাই, ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা হোক।’

অভিযোগ রয়েছে, জমা দেওয়া ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্থও নানা কারণ দেখিয়ে পুনরায় অনুষদগুলো নিয়ে যায়। এতে দেখা গেছে, ভর্তি আয়ের টাকা থেকে কোনো অর্থই জমা হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে।

বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ইউজিসি নিয়ম মেনে হয়তো আয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ জমা দিচ্ছে না। তবে ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক সব খরচ মিলিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি অর্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খরচ হয়ে যায়। আর অনুষদগুলো তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই অংশ। বিভিন্ন প্রয়োজন দেখিয়ে যে টাকা নেওয়া হয় তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজেই ব্যয় হয়।

 এমএসএল