জবি ক্যাম্পাসে খালেদা জিয়ার ম্যুরাল চান না শিক্ষার্থীরা


Desk report | Published: 2024-10-08 16:41:37 BdST | Updated: 2024-11-04 13:15:18 BdST

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক ও ম্যুরাল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক ও ম্যুরাল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতার নামফলক চাইলেও কোনো দলীয় ম্যুরাল চান না শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এদিকে গতকালও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একই দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবি, যদি ম্যূরালের বিপরীতে আরেকটি ম্যূরাল তৈরি করা হয়, তাহলে ক্যাম্পাস আবার দলীয়করণ করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি চান না।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের ম্যূরাল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খালেদার জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। ফ্যাসিবাদ আমলে তার নামের যে নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই হতে পারে তার স্মৃতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই পথে না হেটে বরং হাটছেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেখানো পথে। হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যূরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিল,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বলে আমরা মনে করছি। নবনিযুক্ত ভিসি দায়িত্ব নেবার পর এখনো কোনো শিক্ষার্থীবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে আমাদের চোখে পড়ে নাই,বরং তার প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য। আমরা জানতে পেরেছি,শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য শিক্ষকদের একটি কমিটি করা হয়েছে।'

কমিটির কাছে আমাদের প্রশ্ন তাদের কাজ কি শুধু ম্যূরাল নির্মাণ করা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকের মধ্যে যদি এই ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে আগামীকাল এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ গণস্বাক্ষর নেয়া হবে এবং রবিবার সেই গণস্বাক্ষরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নামে অভিযোগ জমা দেয়া হবে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর। সেই সাথে কঠোর অবস্থানে যাবে শিক্ষার্থীরা।

এ দিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয়ের কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, এখানে কোনোক্রমেই ম্যূরাল স্থাপন হচ্ছে না। এখানে বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক আর একটা ছবি থাকবে, সেই সঙ্গে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তারিখসহ সঠিক ইতিহাসটি। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ম্যূরাল স্থাপন হচ্ছে এ নিয়ে যে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে তা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ছবি থাকা নিয়ে তিনি বলেন, ছবি থাকাকেই ম্যূরাল বলে না। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ভবিষ্যত প্রজন্ম অনেকে হয়তো চিনবে না, তাই শুধু একটা ছবি থাকবে যেন সবাই জানতে পারে বেগম জিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে যারা বিপক্ষে লিখছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যখন রাতের আধারে এই নামফলক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল তখন কি তারা প্রতিবাদ করেছিল?

এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক পুনঃস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম।

শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট একই কমিটির সদস্য ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, নামফলক আর ম্যূরাল এক জিনিস নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার স্বীকৃতি হিসেবে নামফলক থাকা দরকার। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন কোনো ম্যূরাল জবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করবে না। খালেদা জিয়াকে চেনানোর জন্য নামই যথেষ্ট, নামফলকের পাশে ছবির কোনো প্রয়োজন নাই। আল্লাহ এই মজলুম নেত্রীর সম্মান বাড়িয়ে দিন।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের তখনকার সহ-সভাপতি ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তীর নির্দেশনায় বর্তমান জবি ছাত্রলীগের বহিষ্ককৃত সহ-সভাপতি মিথুন বাড়ৈ সহ কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতের আঁধারে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম সংবলিত নামফলকটি ভেঙে ফেলে। এর আগে ২০১৭ সালের ৮ জুন প্রথমবারের মতো রাতের আঁধারে খালেদা জিয়ার নাম সংবলিত নামফলক ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়। পরদিন ৯ জুন প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করে এবং নামফলক পুনঃস্থাপনের জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেয়া হলে তখনকার প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদের মধ্যস্থতায় তা পুনঃস্থাপিত হয়। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত নামফলকটি ভাঙচুর করার পর আর তা ঠিক করেনি তৎকালীন প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক উন্মোচন করেন। ওই ঘোষণার আলোকে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়।