রাবিতে কর্মচারীদের জন্য ১ শতাংশ পোষ্য কোটা পুনঃনির্ধারণ, সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা


Abu Saleh Shoeb | Published: 2025-01-01 20:10:18 BdST | Updated: 2025-04-24 14:33:58 BdST

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক ও কর্মকতাদের সন্তানদের কোটা বাতিল করে কেবল সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ১ শতাংশ কোটা পুনঃনির্ধারণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল ১০টার ভিতরে এই ১ শতাংশও বাতিল না করলে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুয়ায়ী ১০টায় সকল প্রশাসনিক ভবনে তালা মারার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।

আজ রবিবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিটির সভাপতি উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব সভায় সভাপতিত্ব করেন।

কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন ২০২৪-২৫
শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কেবল সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এতে শিক্ষক ও কর্মকতাদের সন্তানদের কোটা বাতিল করা হয়েছে।

প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। ১ শতাংশও পোষ্য কোটায় আসন বরাদ্দ রাখতে দেব না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাবার দৈনিক ইনকাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তাদের থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী না কর্মচারীরা।

তিনি শহিদের কসম নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসনের হাতে এখনো ১৬ ঘণ্টা সময় আছে ভাবার জন্য। এরপর আর সময় দেওয়া হবে না। জাস্ট ১০টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হবে। পোষ্য কোটা বাতিল না হলে অচল করে দেব এই রাবি, শহিদের কসম।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউই সুবিধাবঞ্চিত নন; বেতন ছাড়াও তারা চিকিৎসা, গৃহঋণ-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুবিধা পান। কোনো কোনো পরিবারে একাধিক চাকরিজীবী রয়েছেন। তাদের কোনো কোটার প্রয়োজন নেই। যদি কোটা দিতে হয়, তবে দিনমজুরদের কোটা দিতে হবে—যারা রিকশাচালক, তাদের সন্তানদের কোটা দিতে হবে। যারা গ্রামে মাছ বিক্রি করে সংসার চালায়, তাদের সন্তানদের কোটা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করলে কোটা দিতে হবে কেন? এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ আছে ক? এই অযৌক্তিক 'পোষ্য কোটা' বাতিল করতে হবে।

হাফসা খাতুন সূচি নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, পোষ্য কোটা বাতিল হবে, হতেই হবে।আমরা ১ শতাংশও মানব না, মানি না।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ভর্তি কমিটি মনে করেছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সন্তানদের এক পার্সেন্ট কোটা রাখা যৌক্তিক। নানা কারণে তারাও বঞ্চিত। যদিও তারা অনগ্রসর না। তবে অন্তত কিছুটা হলেও তারা পিছিয়ে পড়া। তাদের যে ইনকাম তাতে তাদের সন্তানদের বাইরে পড়ানো সম্ভব না। মানবিক কারণে তাদের এক পার্সেন্ট কোটা রাখা হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যাতে এই দাবিটা মেনে নেয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব এক ফেসবুক পোষ্টে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য কোটা বাতিল করা হয়েছে, তবে নিম্নস্তরের কর্মচারীদের জন্য ১% কোটা বহাল রয়েছে। সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হলেও ভর্তি উপকমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। উপাচার্য যৌক্তিক ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন ছাত্রদের জীবনমান, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভর্তি পরীক্ষা ও রাকসু নির্বাচনে মনোযোগ দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে গত একমাস ধরে আন্দোলন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে।