ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দুইদিন আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত নেমে সিআইডি এ তথ্য জানতে পেরেছে।
সিআইডি সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, পরীক্ষার আগের দিন ১১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ার এক বাসায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে ১০-১২ জন ভর্তিচ্ছু একসঙ্গে পড়াশোনাও করে।
ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা চার আসামি সিআইডিকে এ তথ্য জানিয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে আটক করে।
এরা হলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক তানভীর হাসান রাফি (২৭), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফরহাদ মিয়া (২৩), ভর্তিচ্ছু এসএম আবু সাঈদ ও শাহ মোহাম্মদ ফাহিম।
পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ চারজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সিআইডি সূত্র জানায়, ভর্তিচ্ছু ফাহিমকে ইন্টার্ন চিকিৎসক রাফি পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ মিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ফরহাদ বৃহস্পতিবার ১০-১২ জন ভর্তিচ্ছুকে মিরপুরের শ্যাওড়া পাড়ার একটি বাসায় জিতুর কাছে পাঠায়। জিতুসহ কয়েকজন ভর্তিচ্ছুদেরকে ফাঁস হওয়া এই প্রশ্ন পড়ায়। সূত্র আরও জানিয়েছ জিতু প্রশ্ন পায় এস এম সানোয়ার নামের একজনের কাছে।
রাজধানীর বাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার ২০১৫ সালে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন।
সিআইডি গত বুধবার রাতে সানোয়ারকে আটক করতে অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন জানান, ঘ ইউনিটে প্রশ্নপত্র ফাসের ঘটনায় আটক চারজন রিমান্ডে আছে। রিমান্ড শেষে শনিবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে। প্রশ্নফাঁসকারী চক্রটিকে চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
গত ১২ অক্টোবর শুক্রবার ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার সময় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি একজন ভর্তিচ্ছুর মোবাইলে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্নপত্র পাওয়ার প্রমাণ পায়। এই প্রমাণ পাওয়ার পরও ১৬ অক্টোবর ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ করে প্রশাসন। এ পরীক্ষায় পাসের হার গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ (২৬ শতাংশ)। এতে পাস করেছে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী।
প্রশ্নফাসের ঘটনাটি সুরাহা না করে ফল প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ওই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আইন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র অনশন শুরু করেন। সেই অনশনে সংহতি জানায় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারাও পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানায়।
পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করা হয়। এর মধ্যে ২২ অক্টোবর অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরের দিন ২৩ অক্টোবর ডিনস কমিটি ‘ঘ’ ইউনিটে উত্তীর্ণদের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ১৬ নভেম্বর সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ওই দিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।