আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুক-ইউটিউবে কথা বললেই গ্রেপ্তার


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা | Published: 2025-05-12 14:14:00 BdST | Updated: 2025-05-29 06:21:22 BdST

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের বৈধতা পেয়েছে পুলিশ। এত দিন প্রশ্নের মুখে পড়ার ভয় থাকলেও এখন আর আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে বাধার মুখে পড়তে হবে না। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা গোপনে কোথাও বৈঠক, সমাবেশ কিংবা মিছিল করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এত দিন আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করলেও গ্রেপ্তার করতে দ্বিধায় পড়তেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

কিন্তু বর্তমানে শুধু মিছিল-সমাবেশ নয়, ফেসবুক-ইউটিউবে কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললে তাকেও গ্রেপ্তার করা যাবে। বিদেশে থেকে যাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুক পোস্ট দেবেন, কমেন্ট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে। এ ছাড়া এখন থেকে পুলিশ পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সোমবার (আজ) সরকারি আদেশ জারি হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারি আদেশ জারি হওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠানো হবে। কেউ সরকারের আদেশ অমান্য করলে যাতে গ্রেপ্তার করা হয় সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, কাগজে-কলমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলেও দলটির অবস্থা নিষিদ্ধের মতোই।

এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সেখানে লেখেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে রেহাই নেই! গোপন বৈঠক, উস্কানিমূলক মিছিল বা পোস্ট করলেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

নিষিদ্ধ হলেও সংগঠনটির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে যে ব্যবস্থা নিতে হতো, কার্যক্রম নিষিদ্ধের পরও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।

বিজ্ঞাপন

গতকাল রাতে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশ আইনের ভেতর থেকে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে।’

সূত্র জানায়, এত দিন ফেসবুক, ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কনটেন্ট তৈরি, পোস্ট দেওয়া, পোস্টে কমেন্ট করার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাইবার স্পেসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় আইনি জটিলতা থেকেও মুক্ত হচ্ছে পুলিশ। সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারে। কিন্তু কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ না হলে ওই সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। ফলে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার এড়াতে চাইতেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণে এখন পুলিশ গ্রেপ্তারের আইনি বৈধতা পেয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসপিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জ এরিয়ায় চলতে দেওয়া হবে না।’

বিষয়টি নিয়ে সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, ‘কোনো সংগঠন যদি নিষিদ্ধ না হয় এবং সেই সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ না থাকে, তাহলে গ্রেপ্তার করা যায় না। এখন যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে সে অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

বন্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সব পেজ : দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।