পটুয়াখালীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ


পটুয়াখালী প্রতিনিধি | Published: 2025-05-13 17:01:10 BdST | Updated: 2025-05-28 20:44:47 BdST

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। একই সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগসহ প্রাইভেট কার পুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ দলের লোকজন।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউপির পটুয়াখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আগুন নেভাতে যাওয়ায় পথে ফায়ার সার্ভিস টিমকে পথে আটকে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে সেনাবাহী তাদের উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্য শাহাদাত হোসেন।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্ভিস জেটিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইন্টাবো ও দাবাজুলির মালামাল খালাস করে আসছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঠিকাদার শাহীন মৃধা। কিন্তু বিএনপির অপর একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিনুল ইসলাম মহাসীন একই ঘাটে ওয়ার্ক অর্ডার নিলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যা নিয়ে ঘাট ছাড়তে না চাওয়ায় মাত্র দু-দিন আগে মহসীনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ মিছিল করে শাহীন মৃধার লোকজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে মোটরসাইকেলে করে লোকজন নিয়ে শাহীন মৃধার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া মারধরের ঘটনাও ঘটে। এ সময় অগ্নিসংযোগ করা হলে কালো ধোঁয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার ব্রিগেড সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

অপরদিকে দাবাজুলি থেকে কোটেশন দিয়ে বৈধভাবে কাজ পেলেও তা করতে দেননি শাহীন মৃধা। এমন অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসীনের। তিনি বলেন, ‘বৈধ ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও আমার লোকজনকে ঘাটে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না শাহীন মৃধা। এমনকি গত রাতে আমার একটি বার্জ, দুটি ফেলুডারসহ মালামাল নিয়ে যায় শাহীন মৃধা। এ নিয়ে সকালে আমার লোকজন ঘাটে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় শাহীনের সাঙ্গপাঙ্গরা। মূলত তারাই হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে।’

এ বিষয়ে শাহীন মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে আজকের এই হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই মহাসীন নাম মাত্র এবং তারই লোক। ক্ষমতার বলে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

শাহীন মৃধা বলেন, মোশাররফ সাহেবের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আমার আজ দেড় কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। আল্লাহ প্রাণটা ভিক্ষা দিয়েছেন। এমনকি মোশারফ সাহেবের বেশ কিছু দুর্নীতির তথ্য আমার কাছে ছিল। তা নষ্ট করতেই তার ক্যাডার বাহিনী আগুন দিয়ে সব পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। আমি এর বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার আমি কিছুই জানি না, আর আমার সম্পৃক্ততাও নেই।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মহাসীনের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে আমি জানি। শাহীনের কী এমন কাগজপত্র রয়েছে? আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা ওর কাছে জিজ্ঞেস করেন।’

পরে শাহীন মৃধার বৈধ ওয়ার্ক অর্ডার আছে কিনা জানতে খোঁজ নিলে তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রজেক্ট দাবাজুলির কোনো কর্মকর্তাও কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘শাহীন এবং মহসীনের মধ্যে ব্যাবসায়িক বিরোধ থাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বর্তমানে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’