বাগেরহাটে দুই ভারতীয়কে এনআইডি কার্ড দেওয়ার অভিযোগ, দুদকের মামলা


বাগেরহাট প্রতিনিধি | Published: 2025-05-13 18:26:01 BdST | Updated: 2025-05-28 19:59:26 BdST

বাগেরহাটে ভারতীয় দুই সহোদর নাগরিককে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

আসামিরা হলেন- বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা বর্তমান বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন এবং চিতলমারী উপজেলার আড়িয়াবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিনকে।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে মামলার বাদী বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের আড়িয়াবর্ণি রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের দুই ছেলে ফণিভূষণ মন্ডল ও প্রতুল মন্ডল বহু বছর আগে ভারতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তারা ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এই দুই ভাইয়ের চিতলমারীর আড়িয়াবর্ণি গ্রামে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রিতে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তাদের ভারত থেকে ডেকে আনেন স্থানীয় মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি।’

মামলার বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারিতে ফণিভূষণ মন্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মন্ডলের জন্ম তারিখ উল্লেখ করে নির্ধারিত ফরমে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের চার দিন পরে তাদের দুই ভাইকে জন্মনিবন্ধন দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরমে ভোটার নিবন্ধনের জন্য বাগেরহাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তারা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তাঁর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়।

অনুসন্ধানকালে ফণিভূষন ওরফে মনি মন্ডলের নামে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফণিভূষন ওরফে মনি মন্ডলের জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৪৮। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে, যা তাঁর জন্মের ৬৯ বছর পর। এতদিনে ভোটার তালিকা হতে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩২ নম্বর ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে থাকায় তিনি আগে ভোটার নিবন্ধন করতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

আরেকটি ভোটার নিবন্ধন ফরম পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৫ নম্বর ঘরে ফণিভূষন ওরফে মনি মন্ডলের বাবার নাম মৃত শশধর মন্ডল দেওয়া হলেও তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম মৃত রবীন্দ্রনাথ মন্ডল। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নম্বর ঘরে বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৪৪ সালে এবং ১৫ নম্বর ঘরে ফণিভূষন ওরফে মনি মন্ডলের জন্মতারিখ ০১/০১/১৯৪৮। অর্থাৎ বাবার মৃত্যুর ৪ বছর পরে ফনিভূষনের জন্ম হয়। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩৪ নম্বর ঘরে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মন্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে তার স্বাক্ষর জাল করে তাকে শনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ওই ভোটার নিবন্ধন ফরমে ফণিভূষন ওরফে মনি মন্ডলের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। এই ঠিকানায় ওই নামে কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৪০ নম্বর ঘরে যাচাইকারীর ঘর ফাঁকা থাকলেও ৪১ নম্বর ঘরে যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে নম্বরটি দেওয়া হয়েছে তা তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদারের। তিনি ওই সময়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

দুদক কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, দিলীপ কুমার হাওলাদার অসৎ উদ্দেশ্যে মোশাররফ হোসেন মোল্লার সাথে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই ব্যক্তির নামে বিধিবহির্ভূতভাবে জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন, যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করা হয়েছে।

এদিকে এই মামলার আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।