বিনিয়োগ টানতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক বিডার


বাসস | Published: 2025-05-13 20:50:12 BdST | Updated: 2025-05-28 18:32:19 BdST

বাংলাদেশে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এই সভায় বিনিয়োগ-সংক্রান্ত নীতিমালা, সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন। বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দেশের জাতীয় স্বার্থের বিষয়, যা কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বিএনপি (বিজেপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, বাসদ এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগে নানা ধরনের বাধা আছে। এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য বিডা যেসব উদ্যোগ নিয়েছে এবং আগামী ছয় থেকে আট মাসে কী করবে—তা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা আশা করা হচ্ছে।

সভায় বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি একটি প্রেজেন্টেশনে সংস্কার পরিকল্পনা ও তার অগ্রগতির খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা, আইনি জটিলতা নিরসন এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, দেশের ২০০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে বিডা পাঁচটি মূল সমস্যা চিহ্নিত করেছে: সরকারি সেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা, শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট পরামর্শের অভাব, দুর্নীতি এবং সম্পদের কার্যকর ব্যবহার।

বিজ্ঞাপন

এই সমস্যাগুলোর সমাধানে বিডা ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়। দলগুলোর কাছ থেকে মতামতও চাওয়া হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিডার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সংস্থাটির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে। পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়।

তারা আরও সুপারিশ করে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে, অবকাঠামো উন্নয়ন, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, আইনি জটিলতা দূর করতে এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে বিডার সমন্বয় বাড়ানো উচিত।

রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থ, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করে।

বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী অংশগ্রহণকারী সব দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতের উপস্থাপনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে, তবে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা বজায় রেখে।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের গঠনমূলক সংলাপ অব্যাহত থাকবে।