ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন


DU Correspondent | Published: 2024-03-14 19:06:27 BdST | Updated: 2024-04-27 12:39:50 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় আইন অনুষদের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। মানববন্ধনের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসে ও উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন।

আসিফ নজরুল বলেন, যেই শিক্ষার্থীরা এখানে গতকাল প্রোডাক্টিভ রামাদান কর্মসূচিটি আয়োজন করেছিল, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি তারা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। তবু শিবির ট্যাগ দিয়ে তাদের ওপর হামলাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি মনে করি, শিবির করার জন্য নয় বরং ইসলামী মাহফিল করার জন্য তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না এমন বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এই ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করছি।

৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন বলেন, গতকাল আমার বিভাগের অনুজদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সেখানে উপস্থিত হই। এসে দেখি আমার অনেক অনুজ সেখানে তখনো বন্দি রয়েছে। তারা বের হতে ভয় পাচ্ছিল না। আমি প্রক্টর স্যারকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি প্রক্টরিয়াল টিম পাঠাননি এবং শিক্ষার্থীদের সাথে তারা কথাও বলেননি। রাসেলের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। আমি প্রক্টর স্যারকে জানালে তিনি বললেন তিনি মিটিংয়ে আছেন। এটা কোনো দায়িত্বশীলন প্রক্টরের কাজ হতে পারে কি-না আমাদের প্রশ্ন।

তিনি বলেন, নিশ্চিত প্রমাণ না থাকলে দেশের আইনেও কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না অথচ তারা শুধু সন্দেহের বশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। তারা এটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে। তারা চায় না কেউ একত্রিত হয়ে ধর্মীয় আলোচনা করুক। গতকাল প্রক্টর ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু আমরা আজকে তার অফিসে গিয়ে দেখবো তারা শিক্ষার্থীদের রেখে কোন কাজে ব্যস্ত ছিল? আমরা ভিসি অফিসে গিয়ে দেখবো কেন তিনি তার শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিলেন না তাদের অবস্থা যাচাই করলেন না।

আইন বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর গতকালের এ আক্রমণ সংবিধান বহির্ভূত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে তারা সেখানে ব্যর্থ। আইন বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। আমরা দাবি করি আমাদের এই শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বোরোচিত হামলাকারী বিপথগামী ছাত্রলীগদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

হামলার ভুক্তভোগী রাফিদ সাফওয়ান বলেন, আমাদের ওপর হামলাটা পুরো অপ্রত্যাশিত ছিল। হামলাকারী শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতা তাওহীদুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর এ ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আমাদের বিভাগের হয়েও আমরা তারই সংগঠন থেকে হামলার স্বীকার হয়েছি। আমাদের দাবি, এ ন্যাক্কারজনক হামলার বিচার অনতিবিলম্বে করতে হবে।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, গতকাল (১৩ মার্চ) বাদ জোহর ক্যাম্পাসে (বঙ্গবন্ধু টাওয়ার মসজিদ) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পবিত্র মাহে রমজান বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সভা করতে বারণ করলে শিক্ষার্থীরা আইন বিভাগের দিকে অগ্রসর হয়। এমন সময় বঙ্গবন্ধুর টাওয়ারের গেটে ২০-৩০ জন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে। এই হামলায় নেতৃত্বে ছিলেন শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ ইসলাম। যার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের এ নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলায় আইন বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিফলন। কারণ এর আগে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টর অফিসের উদাসীনতা ও বিচার বিমূখ আচরণ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চিতকরণ বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলাকারী সন্ত্রাসী তৌহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা এই হামলায় অংশগ্রহণকারী সবার পরিচয় প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, এই বর্বর হামলার ইন্ধনদাতাদের সামনে এনে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নিশ্চিতে আরও জোরালো ভূমিকা পালনের দাবি জানান। অন্যথায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই হামলার বিচার আদায়ে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।