প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষা

ইংরেজি ও গণিতের প্রভাবে খারাপ ফল


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2017-12-31 17:06:37 BdST | Updated: 2025-03-16 20:32:14 BdST

ইংরেজি ও গণিতে খারাপ করার কারণে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় (জেডিসি) পাসের হার কমেছে। গতবারের চেয়ে এই পরীক্ষায় এবার পাসের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

শুধু পাসের হারে নয়, জিপিএর সংখ্যায় গতবারের চেয়ে এবার পিছিয়ে। গতবারের চেয়ে এবার জিপিএ ৫ কমেছে প্রায় ৬০ হাজার। বিশেষ করে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হারে বিপর্যয় হয়েছে। এ বোর্ডে এবার পাস করেছে ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা সার্বিক পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে।

বিজ্ঞাপন

এবার প্রাথমিক এবং ইবতেদায়ী সমাপনীতেও পাসের হার কমেছে। গতবারের চেয়ে প্রাথমিকে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ইবতেদায়ীতে প্রায় ৩ শতাংশ পাসের হার কমেছে। এ ক্ষেত্রেও ইংরেজি এবং গণিতের প্রভাব পড়েছে।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) একযোগে প্রকাশিত হয়েছে জেএসসি ও জেডিসি, পিইসি ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার ফল। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব পরীক্ষার ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন। পরে দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী এবং এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

সারাদেশের প্রায় অর্ধকোটি পরিবারে এখন উচ্ছ্বাস। বইছে আনন্দের বন্যা। ভালো ফল করে নেচে গেয়ে উত্সব করছে শিক্ষার্থীরা।

অষ্টম বারের মতো অনুষ্ঠিত জেএসসি (অষ্টম শ্রেণি) পরীক্ষায় আটটি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর সার্বিক পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

ফল সংগ্রহের জন্য বাবা-মাকে নিয়ে দুুপুরেই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয় স্কুল প্রাঙ্গণে। ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কোথাও কোথাও ছিল অন্যরকম আয়োজন। স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রামের তালে তালে নেচে-গেয়ে শিশুরা বাবা-মায়ের সাথে আনন্দ করছে। ভালো ফলের কারণে অনেকের চোখে ছিল আনন্দ অশ্রুও। মিষ্টির দোকানগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

জেএসসি-জেডিসি

এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৪২ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন। এরমধ্যে জেএসসিতে অংশ নেয় ২১ লাখ ৩ হাজার ৭৬৩ জন, পাস করেছে ১৭ লাখ ৭ হাজার ২৪ জন। জেডিসিতে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ১১ হাজার ২৪৭ জন। গতবারের চেয়ে জেএসসিতে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। জেএসসিতে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জেডিসিতেও কমেছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

এবার জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৯। এবার জেডিসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ হাজার ২৩১ জন। গতবার এ সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৯ জন ।

ঢাকা বোর্ড : পাসের হার শতকরা ৮১ দশমিক ৬৬ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬ হাজার ৮৪৮ জন।

রাজশাহী বোর্ড : পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৪ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৬৩৩ জন।

কুমিল্লা বোর্ড : পাসের হার ৬২ দশমিক ৮৩ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ জন শিক্ষার্থী।

যশোর বোর্ড : পাসের হার শতকরা ৮৩ দশমিক ৪২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬১২ জন ।

চট্টগ্রাম বোর্ড : পাসের হার শতকরা ৮১ দশমিক ১৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৩১৫ জন ।

বরিশাল বোর্ড : মোট পাসের হার ৯৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৪৩১ জন ।

সিলেট বোর্ড : পাসের হার শতকরা ৮৯ দশমিক ৪১ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৬২১ জন ।

দিনাজপুর বোর্ড : পাসের হার ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৬২ জন।

মাদ্রাসা বোর্ড : পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ২৩১ জন।

প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী

দুটি পরীক্ষায় ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৬১৫ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে পাস করেছে ২৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ২১৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। মোট ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৮ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন।

এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এবার প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন। অপরদিকে ইবতেদায়ীতে পেয়েছে ৫ হাজার ২৩ জন।

ইবতেদায়ী : ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৯ ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭০৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৬ জন ছাত্রী।

২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৪ জন সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯২ দশমিক ৯৪ ভাগ। উত্তীর্ণদের মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ জন ছাত্রী। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২৩ জন। তন্মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৬০৭ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৪১৬ জন।

খারাপ ফলের কারণ

ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার কমায় সার্বিক পাসের হার কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। গতবছর জেএসসি-জেডিসিতে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ। এবার পাসের হার কমে হয়েছে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতবার কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ৯২ দশমিক ০৮ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৭০ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার কমেছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, শিক্ষার্থীরা এখনও গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বল রয়েছে। এর প্রমাণ এবারের পরীক্ষার ফল। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হারে ইংরেজি ও আরবি বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ছায়েফউল্লাহ।

সব বোর্ডেই ইংরেজিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে অনেক কম। যশোর বোর্ডে গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

গণিতের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। গতবারের চেয়ে এবার গণিতে পাসের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। গতবার গণিতে পাস করেছিল ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে এবার গণিতে পাস গতবারের চেয়ে কমেছে ৬ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে পাস করেছে ৯১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যশোরে গণিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ কমেছে। এবার এ বোর্ডে পাস করেছে ৮৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

প্রাথমিকেও ইংরেজি এবং গণিতে পাসের হার কমেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলায় ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, গণিতে ৯৮ দশমিক ২১ শতাংশ, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ৯৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ পাস করেছে।

তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যে ভাবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে আমরা পেছনে আছি। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

এইচজে/ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭