
স্বপ্ন জয়ের পথে প্রতিবন্ধী আজহারুল। শত বাধা উপেক্ষা করে হামাগুড়ি দিয়ে এসে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। জন্ম থেকেই পা দুটি উল্টো ও সরু-বাঁকা। এমনকি তার হাত দুটিও বাঁকা। তারপরেও দু'হাতের উপর ভর করে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে চলেছে আজহারুল ইসলাম। তার মনের মধ্যে রয়েছে শতভাগ জোর।
এ জন্য বাড়ি থেকে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কোনমতে হামাগুড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসত আজহারুল। সে এসএসসি পরীক্ষা হাতে লিখে দিবে বলে এ সংবাদদাতাকে জানান। আজহারুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বনতিয়শ্রী গ্রামে। বালালী বাঘমারা উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে সে। বাবা মনির উদ্দিনের ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। তার বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালায়।
আজহারুল ইসলামের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর ধরে দু'হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসত আজহারুল। যদি অটো কিংবা রিকশা দিয়ে আসতে হয় তাহলে প্রতিদিন খরচ হয় ৫০ টাকা। আজহারুলের দিন মজুরের বাবার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। সে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২ দশমিক ৮৩ পেয়ে কৃতকার্য হয়। জেএসসিতে পায় ২ দশমিক ৫৫।
বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আজহারুল আসলে জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় দরজার পাশে দেখা হয় তার সাথে। এ সময় আজহারুল ইসলাম বলে, 'লেখাপড়া শিখে আমি একজন সরকারি অফিসার হতে চাই।'
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার বলেন, আজহারুল একজন মেধাবী ছাত্র, আর্থিক সমস্যার কারণে ওকে প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা আসতে হয়েছে। আমি চাই বিত্তবানরা যেন ওকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাহার উদ্দিন বাবুল বলেন, আজহারুলের যাবতীয় বই, খাতাসহ সকল প্রকার উপকরণ বিদ্যালয় থেকে দেয়া হয়। আমরা তার মাসিক বেতন নেই না। এমনকি এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে ও টাকা নেওয়া হয়নি। আমাদের বিশ্বাস আজহারুল এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করবে। সূত্র: ইত্তেফাক।
টিআই/ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮