চাই শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রবর্তন!


Dhaka | Published: 2019-11-13 09:57:49 BdST | Updated: 2024-05-03 10:01:55 BdST

সম্প্রতি সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সর্বমহলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে কেউ কেউ আবার যথাযথ পদ্ধতি রেখে ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জোরারোপ করেছেন। তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথার্থতা রয়েছে এবং বহুল প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে। নতুন নতুন বিশ^বিদ্যালয় হচ্ছে । দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি সভ্য পৃিথবীর নাগরিক হিসেবে। উন্নত বিশে^র উচ্চ শিক্ষার পদ্ধতিগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি।
যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে এসেছি শিক্ষকরা ছাত্রদের মূল্যায়ন করে এসেছেন। শিক্ষকদের মর্যদার কথা শুনতে শুনতে শিক্ষা জীবন পার করেছি আমরা। এ কথা অনস্বীকার্য যে একজন মানব শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষকই মূল ভুমিকা পালন করেন। একজন শিক্ষক শুধু বেতনের জন্য চাকুরী করেন এটাকে ছাড়িয়ে বাবা মায়ের ভূমিকা পালন করেন আরো বেশি। একজন সত্যিকারের শিক্ষক ছাত্রের জন্য আশীর্বাদ। একথা আমরা স্বীকার করতে পারি একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর জন্য যা করবেন তা তার ভালোর জন্যই। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করি যে, শিক্ষকের অবহেলায় অনেক শিক্ষার্থীও শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়েছে, শিক্ষকদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। কিন্ত আশার খবর হলো এটা মহামারি আকারে প্রকাশ পায়নি এখনো। কারণ আমাদের দেশের শিক্ষকরা এখনো শেখানোর ব্রত নিয়েই শিক্ষকতা পেশায় আসেন।
যেহেতু বলা হয়ে থাকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক হন সিনিয়র স্কলর এবং শিক্ষার্থীরা হন জুনিয়র স্কলর। সুতরাং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত। শিক্ষক শিক্ষার্থী গুরুগম্ভীর শব্দে আটকে না থেকে উভয়ে উভয়ের জন্য সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া উচিত। শ্রেণী মূল্যায়ন হবে সহযোগিতার অন্যান্য উদাহরণ। শিক্ষক অনেক সময় নিজে জানেনও না তাঁর পাঠদানে কোন কোন ব্যাপারগুলো ভুল, কোন জায়গায় পরিবর্তন করলে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি উপকৃত হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হাতে যদি একটি মূল্যায়ন শীট দেওয়া হয় আবেগের বশবর্তী না হয়ে যদি শিক্ষার্থী সহযোগিতার নিমিত্তে শিক্ষকের ভুলগুলো ব্ল্যাঙ্ক কাগজে লিখে দেয়। শিক্ষক সেগুলোর আলোকে পরের সেমিস্টারের জন্য নিজেকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। এখানে অনেকের মনে হতে পারে একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর পক্ষে মূল্যায়ন করা সম্ভব কিনা। এখানে বলা বাহুল্য উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী জুনিয়র স্কলার আর শিক্ষার্থী কখনো শিক্ষকের সবকিছু মূল্যায়ন করতে যাবেন না। পাঠদান পদ্ধতিতে কোনগুলো পরিবর্তন কিংবা সংযোজন করা যেতে পারে সেগুলো মূল্যায়ন শীটে লিখতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বংশ্লিষ্ট মহল শিক্ষক মূল্যায়ন না লিখে ‘শ্রেণী মূল্যায়ন পদ্ধতি’ কিংবা অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতে পারেন।
শ্রেণী মূল্যায়ন কেন?
শেষ ক্লাসে শ্রেণী শিক্ষক একটি করে মূল্যায়নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন। এতে দেওয়া থাকবে বিভিন্ন সূচক। প্রতিটি সূচকে আলাদা আলাদা নম্বর বণ্টন করা থাকবে। এতে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষক সম্পর্কে নির্ভয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরবে। এভাবেই শিক্ষককে মূল্যায়ন করবে শিক্ষার্থীরা।
কোনো শিক্ষক যদি শ্রেণীকক্ষে দায়িত্বহীনতা, অপরিপক্বতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন তা উঠে আসবে মূল্যায়নপত্রে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ, পাঠদানের কলাকৌশল, ক্লাস রুমে আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা, বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়ানোর কৌশলসহ নানা বিষয় মূল্যায়ন করা হবে এতে।
তবে এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো শিক্ষকদের কোন মার্কিং কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা। আমাদের শিক্ষকরা সবাই সম্মানিত এবং তাঁরা সকলেই চান নিজেদের সর্বোচ্চটা শিক্ষার্থীদের দিতে। শুধু এইক্ষেত্রেই শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এমনকি এটা বিভাগীয় তত্বাবধানে হলেও সকল প্রকার মূল্যায়নশীট শিক্ষকদের হাতে থাকবে। তাদের নিজেদের উন্নয়ন সাধনে এটি ফলপ্রসূ হবে।

শ্রেণী মূল্যায়ন দেশে দেশে!
উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের খ্যাতনামা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু আছে। বিভিন্ন রীতির মধ্যে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো 'শ্রেণী মূল্যায়ন পদ্ধতি'। বছরের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে মূল্যায়নপত্র তুলে দেন শিক্ষক। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের পাঠদান, আচার-আচরণ, চলাফেরা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশ করেন মূল্যায়নপত্রে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স ও শ্রী শিক্ষায়তন কলেজে চালু আছে এ পদ্ধতি। এই দুই কলেজে শিক্ষকদের মূল্যায়নের পাশাপাশি কলেজ সম্পর্কেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে শিক্ষার্থীরা।
এই দুই কলেজের আদলে রাজ্যের সব কলেজে শিক্ষক মূল্যায়ন চালু করতে চাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিভিন্ন কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংসদ। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শিক্ষক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের বিষয়ে তাদের মতামত জানাবে ছাত্রছাত্রীরা। শ্রেণীকক্ষে দায়িত্বহীনতা, অপরিপক্বতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন তা উঠে আসবে মূল্যায়নপত্রে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ, পাঠদানের কলাকৌশল, ক্লাসরুমে আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা, বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়ানোর কৌশলসহ নানা বিষয় মূল্যায়ন করা হবে এতে।

পরিশেষে এটুকু বলা যেতে পারে শিক্ষক মূল্যায়ন হোক আর শ্রেণী মূল্যায়ন হোক এ ব্যবস্থার প্রবর্তন হলে আমাদের উচ্চ শিক্ষা আরো এগিয়ে যাবে। শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে পাশাপাশি আমাদের শিক্ষকরা সচেতন হবেন। সবশেষে উপকৃত হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।

লেখক:

মুহা. মাহমুদুল হাসান
সদস্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)