বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি: অনিয়মে শীর্ষে ঢাবি


মানবজমিন | Published: 2017-08-11 03:22:43 BdST | Updated: 2024-05-12 07:27:48 BdST

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রতিবছর নির্দিষ্ট আসনসংখ্যার বিপরীতে সমানসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম অমান্য করে আসনসংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে গত কয়েক বছর।

আর এই অনিয়মে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক বিবরণি থেকে এই অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ১৩ হাজার ৫১৭ আসনের বিপরীতে ভর্তি করানো হয় ১৩ হাজার ৯২৮ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার ৪২ আসনের বিপরীতে ১০ হাজার ২৪৬ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ১৪৫ আসনের বিপরীতে ২ হাজার ১৪৬ জন, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬২৮ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৭৪৭ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৮১৫ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৮৩৯ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১০৬ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ১৪৫ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৮৩ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৩২৮ জন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৪৫ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ২৬৯ এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭৫ আসনের বিপরীতে ৫৭৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা শিক্ষা সংকোচনে বিশ্বাস করি না।

মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিই। প্রতিটি বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে একটি সুপারিশ থাকে। যার কারণে নির্ধারিত আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞানকেন্দ্রিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থী বেড়ে যায়। কারণ বিজ্ঞানের একজন ছাত্র পরবর্তী বছর মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে চলে যায়। তখন আসনটি খালি হয়ে যায়। একারণে দেখা যায়, কোনো কোনো বিভাগে মাত্র বিশজন শিক্ষার্থী থাকে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়েরও আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এসব কারণে অতিরিক্ত কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অতিরিক্ত ভর্তি করানো হলেও তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তবে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি দেখিনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ভর্তির সময় মেধা তালিকায় থাকায় ২/১ জনকে বাড়তি ভর্তি করানো হয়। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি অনুমোদন কিভাবে করা হয়েছে জানতে চাইলে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানি না। তবে নতুন ভর্তি হলে সবার একসঙ্গে অনুমোদন করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে ভর্তি কমিটি বলতে পারবে। তবে একই নাম্বারে একাধিক হলে আসনের অতিরিক্ত ভর্তি করানো হয়। এদিকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও সে অনুযায়ী বিভাগগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় না। বেশ কয়েকটি বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, ল্যাব, শ্রেণি কক্ষ, শিক্ষকদের বসার স্থানের সংকট রয়েছে। ৫০ জনের ক্লাস রুমে ১০০/১২০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন। অধিকাংশ বিভাগে নির্ধারিত ক্লাস রুম নেই। এক বিভাগের ক্লাস অন্য বিভাগের ক্লাস রুমে নিতে হয়। কখনো কখনো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো ব্যাচের ক্লাস থাকলে তাও সম্ভব হয় না। যার কারণে ক্লাস শুরুর পূর্বেই শিক্ষার্থীদের রুম খোঁজার কাজে সময় ব্যয় করতে হয়। টেলিভিশন, ফিল্ম ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের ল্যাব ও অফিসের জন্য জায়গা দেয়া হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গাড়ি রাখার স্থানে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেক সময় কলা ভবনে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। ফার্মেসি বিভাগের পাঁচটি ব্যাচের জন্য রয়েছে চারটি ক্লাস রুম। এই অনুষদের আরো তিনটি ব্যাচের ক্লাসও এই রুমগুলোতে হয়। যার কারণে শ্রেণিকক্ষগুলোতে প্রচণ্ড চাপ থাকে।

এ ছাড়া বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর অধিকাংশ ল্যাবের আকারও ছোট। ফলে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের চাপের কারণে ভালোভাবে ল্যাব ব্যবহার করতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ক্লাস রুম সংকট সমস্যায় বেশি পড়তে হয় কলা ভবনের শিক্ষার্থীদের। সেখানে এক রুমেই ৩/৪টা বিভাগের ক্লাস নিতে হয়। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলে শিক্ষার মানের ক্ষতি হবে। নির্দিষ্ট আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ মেধার উপর ভিত্তি করে ভর্তি করানো হয় বলে আমার ধারণা।

সে ক্ষেত্রে আমাদের মেধাবী ছাত্ররা যদি সুযোগ পায় তাহলে আমি খারাপ ভাবে দেখবো না। আপনি ভিসি থাকা অবস্থায় এমন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সময় যেটা ছিল দ্বিতীয়বার একটা পরীক্ষা দিতে পারতো। এজন্য বিভাগগুলো যদি একশ আসন থাকতো তাহলে একশ বিশজন নিতো। কারণ বিশজন তো চলে যাবে। তিনি বলেন, বিভাগ নির্ধারণ করে কতগুলো সিট থাকবে। বিভাগ তাদের সুযোগ-সুবিধা দেখে তা নির্ধারণ করতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সেটির অনুমোদন করে। তিনি বলেন, এখন যেহেতু দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ নেই। তাহলে সতর্কতার সঙ্গে বিভাগগুলোকে সিট নির্ধারণ করতে হবে।

 

এমএসএল