উপাচার্যহীন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2018-01-21 20:46:46 BdST | Updated: 2024-05-17 17:19:03 BdST

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পঞ্চম উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. অলী আশরাফের দ্বায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩ ডিসেম্বর। এর মধ্যে চলে গেছে দেড় মাসেরও বেশি সময়। এখন পর্যন্ত নতুন কোন উপাচার্য নিয়োগ পাননি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এদিকে ট্রেজারার পদ শূন্য, উপ-উপাচার্য নেই, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা স্থগিত, আটকে আছে ১০ বিভাগের ফলাফল, স্থগিত রয়েছে ১২ বিভাগের পরীক্ষা কমিটি গঠন, পরীক্ষক নিয়োগ আটকে আছে ১৯টি পরীক্ষার, ক্লাস-পরীক্ষা শেষ হলেও উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া নতুন করে পরীক্ষায় বসতে পারছেন না আরও ৫-৬টি ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা, বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজও চলছে ঢিলেমিভাবে। এই নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফলে কার্যতই অচল এবং কচ্ছপ গতিতে চলছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপাচার্য না থাকার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে নেয়া হচ্ছে না। এই সেশনের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ১৭ ও ১৮ নভেম্বর। পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রমাসন। কিন্তু অনিবার্য কারণ দেখিয়ে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্তগিত করে দেয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ক্লাস শুরু করে দিয়েছে সেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ২-৩ মাসের সেশনজন নিয়ে নবীনদের ক্লাস শুরু করতে হবে। তার চেয়ে বড় কথা কবে পরীক্ষা হবে সেটাইও বলা যাচ্ছে না । এই নিয়ে হতাশায় দিন পার করছেন ভর্তিইচ্ছুকদের অভিভাবক এবং ভর্তি ইচ্ছুকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নতুন উপাচার্য আসলে প্রথম কাজই হবে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। তবে কবে উপাচার্য আসবেন এমনটা নিয়ে ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা কথাশুনা যাচ্ছে।

উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ চলে চাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই নতুন উপাচার্য আসার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছিল। এখন কিছুটা কম শুনা যাচ্ছে । কে আসবেন এমনটাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, অল্প কিছুদিনের মধ্যে যে কোন দিন উপাচার্য চলে অসতে পারেন।

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নোমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য যেই আসুন না কেন দ্রুত আসা জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয় হামাগুড়ি দিয়ে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে এসময় অচল হয়ে পরবে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমরা চাই দূর্নীতি মুক্ত প্রগতিশীল চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী উপাচার্য। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা ভাববেন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাববেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘ যেহেতু উপাচার্য নেই সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় অভিবাবকহীন। অভিভাবক ছাড়া একটি পরিবার চলে কি করে? স্বাভাবিক ভাবে কোন কাজই করা যাচ্ছে না। নতুন কোন কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না, শিক্ষার্থীদের সেশনজন বাড়ছে। যতদ্রুত সম্ভব আমরা নতুন উপাচার্য চাই। নতুন উপাচার্য নিয়োগই সকল সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো: মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সকল প্রশাসনিক কাজ কার্যক্রম ধারাবাহিক ভাবে চলছে না, বেতন হচ্ছে না। তাই উপাচার্য নিয়োগ হওয়া জরুরী।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধান মন্ত্রী হয়তো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিরাগ। ওনার মনে হয়তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কষ্ট আছে। যার কারণে এতা দেরী হচ্ছে।’

টিআই/ ২১ জানুয়ারি ২০১৮