কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে


কুবি টাইমস | Published: 2018-01-26 12:00:33 BdST | Updated: 2024-05-17 15:46:27 BdST

গত বছরের ২ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ বিদায় নিলেও এখন পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রায় দুই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদটি শূন্য থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত প্রায় ৪ শ’ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। সব মিলিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম।

জানা গেছে, উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের নভেম্বর মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ভর্তি পরীক্ষায় ৬টি অনুষদে ১ হাজার ৪০ টি আসনে ভর্তির জন্য মোট ৫৪ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। কিন্তু গত বছরের ৬ নভেম্বর অনিবার্য কারণে এ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর ২ ডিসেম্বর বিদায় নেন উপাচার্য ড. আলী আশরাফ।

নতুন কেউ নিয়োগ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা স্থগিত করার সময় পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। এতে ভর্তি হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের সেশন জটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী জানান: ‘এখন পর্যন্ত অনার্স ও মাস্টার্সের মোট ৩৩ টি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারী নঈমুল ইসলামের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় বেতন পাচ্ছেন না তিনি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছে তার। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আর্থিক সকল ক্লিয়ারেন্সের ক্ষমতা একমাত্র উপাচার্যের হওয়ায় আমার বেতন প্রদানের সুযোগ নেই। তবে উপাচার্য দায়িত্ব দিয়ে গেলে সেটা ভিন্ন ছিল কিন্তু সাবেক উপাচার্য তা করে যাননি। এমনকি উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন কোন কাজের টেন্ডার বিল বা শ্রমিকদের বেতনও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন: উপাচার্য না থাকায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রত্যেকে চরম সমস্যায় দিন কাটাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমাদের সমস্যা বিবেচনা করে সমাধান করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন বলেন: একটি বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাণ হচ্ছেন ভাইস চ্যান্সেলর। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। কারণ কবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ হবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউ।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুজিবর রহমান মজুমদার জানান: উপাচার্যের ব্যাপারে সার্বিক অবস্থা আমরা শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও ইউজিসি কে জানানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে ভালভাবে জানেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে হয়তো উনারা যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনে সময় নিচ্ছেন। আমরা আশা করি, সৎ ও যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।

তবে উপাচার্য নিয়োগের দাবীতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংগঠনিক জোট। মানববন্ধন শেষে জোটের পক্ষ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে এক সপ্তাহের সময়সূচিতে উপাচার্য নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলন হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা। মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এসজে/ ২৬ জানুয়ারি ২০১৮