টেন্ডার ছাড়াই ১০ লাখ টাকার মালামাল ঢুকল রাবির জিমনেসিয়ামে


RU Correspondent | Published: 2022-07-02 22:08:52 BdST | Updated: 2024-03-19 10:58:39 BdST

কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে ঢোকানো হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল। গত ২০ জুন গোপনে এসব মালামাল ঢুকেছে। এই কাণ্ডে জিমনেসিয়ামের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, টেন্ডার ছাড়াই গত ২০ জুন জিমনেসিয়াম আধুনিকায়নের নামে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ঢোকানো হয়। সম্প্রতি জিমনেসিয়ামের আধুনিকায়নে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই টাকায় এসব মালামাল কেনা হয়েছে।

নতুন করে কেনা হয়েছে বেঞ্চ প্রেস, ক্যাবল ক্রস ওভার, সুপার স্কুয়াড মেশিন, রাবার সিট ওয়েট, ডামবেল স্ট্যান্ড, ওয়েট লিফটিং প্ল্যাটফর্ম, লেগ প্রেস ফিক্সড বারবেল, শোল্ডার প্রেস বারবেল স্ট্যান্ডসহ ১৫ ধরনের সরঞ্জাম। নতুন সরঞ্জাম ঢোকাতে রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় আগের সরঞ্জামগুলো। করে সেগুলোর আর হদিস মেলেনি।

সূত্র জানায়, সরঞ্জাম কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক সরকার, শরীর চর্চা বিভাগের সিনিয়র উপ-পরিচালক জামিলুর রহমান ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেনাকাটায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন শরীরচর্চা বিভাগের সিনিয়র উপ-পরিচালক জামিলুর রহমান ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান। নিয়ম-নীতি না মেনেই কেনাকাটা করেছেন তারা। দরপত্র আহ্বান না করেই কেনা হয়েছে এসব সরঞ্জাম। কেনাকাটার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাটেরও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে কেনাকাটার ৬ দিন পর ২৬ জুন নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। শরীরচর্চা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বাবু বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ২২ জুন। এতে শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১৫ আইটেম মালামাল কিনতে ৭ দিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

কেনাকাটার পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর ওই দিনই সরিয়ে ফেলা হয় বিজ্ঞপ্তি। তখন থেকেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা স্বীকার করেন শরীর চর্চা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, গত ২২ জুন ক্রয় কমিটির দুইজন সদস্য আমার কাছে এই বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে আসেন। তারা আমাকে এতে স্বাক্ষর দিতে বলেন। পরে আমি এতে স্বাক্ষর করে বোর্ডে টাঙিয়ে দেই।

তিনি আরও বলেন, আমি ক্রয় কমিটির সদস্য না। এসব সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য আলাদা একটি কমিটি আছে। তারা কোন পদ্ধতিতে এসব ক্রয় করেছে সেটা তারা জানেন।

ক্রয় কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক সরকার পরিচালকের এই দাবি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর কথা বলিনি। পরিচালক হয়তো ভুলবশত এটি টাঙিয়েছেন।

তিনি স্বীকার করেন, আমরা এসব সরঞ্জামাদি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ক্রয় করিনি। এসব জিনিসপত্র ক্রয় করা হয়েছে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) পদ্ধতির মাধ্যমে। এই জন্য আমরা কোনো বিজ্ঞাপন বা এ জাতীয় কিছু দেয়নি।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে জিমনেশিয়ামের কর্মকর্তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীরা নাম প্রকাশ না করে জানান, নতুন কেনা যন্ত্রপাতি ঢোকানোর পর চালু হয়নি জিমনেসিয়াম। ২০ জুন মালামালগুলো এসেছে। কিভাবে এবং কারা এসব এনেছেন তা তারা জানেন না।

পরে এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় শরীরচর্চা বিভাগের সিনিয়র উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, কেনাকাটায় কোনো অনিয়ম হয়নি। এখনো কেনাকাটা চলমান। নিয়ম মেনেই কেনাকাটা চলছে। এ সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি জানাতে রাজি হননি।

অন্যদিকে মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় শরীর চর্চা বিভাগের আরেক সিনিয়র উপ-পরিচালক জামিলুর রহমানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জিমনেশিয়ামের কেনাকাটায় অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, দরপত্র আহ্বান না করেই কেনাকাটা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তিনি কেনাকাটার নথিপত্র চেয়েছেন। শনিবার (০২ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে বসার কথা রয়েছে।

//