শীতের আগমনে রাবিতে জমেছে পিঠা উৎসব


RU Correspondent | Published: 2023-12-04 15:43:23 BdST | Updated: 2024-12-09 00:11:38 BdST

গোধুলী শেষে সন্ধ্যা নামার প্রস্তুতি চলছে। চারিদিকে শুভ্র কুয়াশার আবরণ। সঙ্গে শীতের হিমেল হাওয়া। খোলা আকাশের নিচে সারি সারি মাটির চুলা সাঁজানো। এতে দাউ দাউ করে জ্বলছে কাঠের টুকরো। সেসব চুলার ওপর কড়াই বসানো। ঠিক মুখোমুখি বসে সবাই পিঠা খাচ্ছেন। কেউ এসেছে পরিবারের সঙ্গে কেউবা বন্ধুদের নিয়ে।

এদিকে চারপাশটায় সবুজ ঘাসের ওপর রঙিন পাটি বেছানো। কিছু টুলও রয়েছে। তড়িঘড়ি করে চলছে পিঠা তৈরির কাজ। এভাবেই জমে ওঠছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র (টিএসসিসি) চত্বর। যা চলবে শীতের শেষ পর্যন্ত।

ক্যাম্পাসের টিএসসিসিতে পিঠার দোকান পরিচালনা করেন মাছুম আলী। তার দোকানে প্রতিনিয়ত ১৩টি চুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ১৮ থেকে ২০ জন কর্মচারী। তার মধ্যে অধিকাংশ রয়েছেন নারীরা। দিনে তার আয় হয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বিকেল ৪টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে তার দোকান।

তার কাছে পাওয়া যায় পাঁচ রকমের পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা, পাঠি-সাঁপটা, পুলি পিঠা। নানা রকম পিঠার সঙ্গে রয়েছে সাত ধরনের ভর্তা। যেমন; বেগুনের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা, ধনিয়া পাতা, কালোজিরা ও কাঁচা মরিচের ভর্তা। এসব প্লেট ও বাটিতে সাজিয়ে ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন তারা।

প্রতি পিস স্পেশাল ভাপা ২০ টাকা, নরমাল ভাপা ১০, চিতই পিঠা ১০টাকা, পুলি পিঠা ৮ টাকা, বিভিন্ন ধরনের তেলের পিঠা ১৫ টাকা ও পাঠি সাপটা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে সাত রকমের ভর্তার বিনিময়ে নিচ্ছেন আরও ১০ টাকা।

বন্ধুদের সাথে পিঠা খেতে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক নাইমুর রহমান সারুল। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো খুবই সুন্দর। শীতকালে আমাদের ক্যাম্পাসে এই উৎসবটা হয়। কিন্তু দিনের বিবর্তনে এই পিঠা উৎসবের ঐতিহ্য টা হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠার যে গুণগত মান ছিল এখন আর সেটা তারা ধরে রাখতে পারছে না। তারপর আনন্দমুখর পরিবেশ হয়ে থাকে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক।

কথা হয় অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী বহ্নি প্রত্যাশার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো অনেক ভালো। এখানে ভাপা পিঠা, কুশলি পিঠা, এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হচ্ছে।

সাত বছর ধরে পিটার ব্যবসা করেন মাছুম আলীর। তার বাসা স্থানীয় বাসা বিনোদপুরে। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে পরে আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। তারপর থেকে অন্য কাজ করতে না পেরে পিঠার ব্যবসা বেছে নেই। আগে বসতাম রোকেয়া হলের সামনে। প্রক্টর স্যার গতবার থেকে আমাকে ওখান থেকে তুলে টিএসসিসির সামনে জায়গা দিয়েছে। সাত থেকে আট বছর ধরে আমি এই ব্যবসা করি।

তিনি আরও বলেন, আগে এক চুলা নিয়ে বসতাম। পরে হলের কাছে আমার ২০টা চুলা হয়। এখন স্যার কিছুটা কমিয়ে দিয়ে এখন আছে ১৩টা চুলা আছে। আমার বাসার মানুষসহ কর্মচারী আছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন। প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমার কাছে পাঁচ রকমের পিঠা পাওয়া যায়। সাত রকমের ভর্তা পাওয়া যায়। এছাড়া পাপড়ও পাওয়া যায়।