কেমন হচ্ছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি?


ঢাকা | Published: 2023-04-17 23:10:18 BdST | Updated: 2024-04-25 07:18:59 BdST

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এবারের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেশ কিছু নতুনত্ব দেখা যাবে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো—কমিটিতে এবার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা স্থান পাবেন। বয়সসীমা ২৮ বছর নীতি শিথিল হচ্ছে। কমিটির সদস্যসংখ্যা গঠনতন্ত্র মেনে ৩০১-এর মধ্যেই রাখা হবে।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের হোমওয়ার্ক একেবারেই গুছিয়ে এনেছি।'

কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের গোটা ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। যারা সংগঠনের জন্য আন্তরিক, যাদের আধুনিক চিন্তাধারণা রয়েছে তাদের রাখা হবে। সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, সৃজনশীলতা রয়েছে এদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

গত ৩০ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সে সময় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেন। এর পরই দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বয়স প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা ও আমরা যাঁরা নেতা নির্বাচিত হয়েছি আমাদের বয়সকে বিবেচনায় নিয়ে কমিটিতে নেতা নির্বাচন করা হবে।’

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, সাংগঠনিক যোগ্যতা মূল্যায়নের পাশাপাশি এবারের কমিটিতে মেধা বিবেচনায় নেতাদেরকে স্থান দেওয়া হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উদ্ভাবনী ও উদ্যোক্তাধর্মী সমাজ তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে, গবেষণাপত্র তৈরি করতে পারবে এমন কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে দেখা যাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা এমন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করব, যারা ছাত্রসমাজকে পথ দেখাতে পারবে। আধুনিকতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এসব নানা ক্ষেত্রে যাদের গুণাবলি আছে তাদের কমিটিতে রাখা হবে।’

এত দিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ভর হয়ে আসছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নির্বাচিত হতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এবার সে ধারা ভঙ্গ হচ্ছে। কেন্দ্রে রাজনীতি করেন এমন নেতারা যেমন থাকবেন, তেমনি জেলা, মহানগরে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরাও স্থান পাবেন। বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন—বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শুধু কেন্দ্রে নয়, প্রান্তে আমাদের অনেক দক্ষ, মেধাবী, যোগ্য, চৌকস নেতা রয়েছে। আমরা মনে করি তাদের মূল্যায়ন করার এটাই সঠিক সময়। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কেন্দ্রীয় সংসদ অনেক বৈচিত্র্যময় হবে, শক্তিশালী হবে এবং সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাকে অনুবাদ করার মতো সক্ষমতা ছাত্রলীগের থাকবে। তৃণমূলের ছাত্রলীগ করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে সাংগঠনিক কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।’

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবার ৩০১ সদস্যের কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী নেত্রীকে স্থান দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নারী নেত্রীদের কমিটিতে দেখা যাবে।

বিগত কয়েকটি কমিটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কত সদস্যের তা নিয়ে প্রশ্ন করলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা দপ্তর সম্পাদকরা উত্তর দিতে পারতেন না। কমিটি গঠনে গঠনতন্ত্রে নির্ধারিত ৩০১ সদস্যের সংখ্যা মানা হতো না। এবার ছাত্রলীগের কমিটি ৩০১ সদস্যের মধ্যেই হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

নতুন আটটি পদ সংযোজন হচ্ছে

এবার ছাত্রলীগের কমিটিতে নতুন আটটি পদ যুক্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ছাত্রলীগ। নতুন আটটি পদ হলো—অটিজম বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রী ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সম্পাদক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক।

কালের কন্ঠ থেকে ঈষৎ সম্পাদিত