ঢাবি প্রক্টর ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন: সাদা দল


DU Correspondent | Published: 2022-06-02 02:57:01 BdST | Updated: 2024-05-18 21:17:31 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘সমর্থন ও মদদেই’ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। সাদা দলের শিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা (ছাত্রলীগকে) মদদ দিচ্ছেন৷ প্রশাসনের সমর্থনেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো ঘটছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানও কোনো পদক্ষেপ নেননি৷

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা এসব অভিযোগ করেন৷ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দাবিতে’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷

ছাত্রলীগ বর্তমান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদপুষ্ট ছাত্রসংগঠন বলে মন্তব্য করেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ছাত্রদল টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছিল৷ কিন্তু সেই স্বাভাবিক কার্যক্রম তারা করতে পারেনি। তাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ৷ নারীদের ওপর পর্যন্ত হামলা করা হয়েছে৷

ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ওই হামলার ঘটনার পর সাদা দলের পক্ষ থেকে আমরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে দাবি জানিয়েছিলাম যে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে, শিক্ষ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনকে তাদের কার্যক্রম চালাতে দিতে হবে৷ উপাচার্য আমাদের কথা শুনেছেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি৷ উপাচার্য তখন পদক্ষেপ নিলে ২৯ মের হামলার ঘটনা ঘটত না৷ ওই হামলার ঘটনা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা (ছাত্রলীগকে) মদদ দিচ্ছেন৷ প্রশাসনের সমর্থনেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো ঘটছে বলে আমরা মনে করি৷ ঘটনার সময় প্রক্টর কোনো দায়িত্ব পালন করেননি৷ তিনি বরং ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন৷ উপাচার্যও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না৷ আগামী দিনে ক্যাম্পাস কেমন চলবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত৷ আশা করি, আগামী দিনে ক্যাম্পাস সবার জন্য অবারিত থাকবে৷’

শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য মামুন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগবিরোধী ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে৷ বেশ কিছুদিন ধরে এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, প্রক্টর) নির্লিপ্ত ছিল, কোনো ভূমিকাই পালন করেনি৷ তারা যেটুকু ভূমিকা পালন করেছে, সেটুকু আবার করেছে সন্ত্রাসীদের পক্ষে৷

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাদা দলের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মো. লুৎফর রহমান৷ তিনি সাদা দলের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন৷ এগুলো হচ্ছে ক্যাম্পাসে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা; দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার; বিগত কয়েক দিনে যেসব শিক্ষার্থী ও নেতা আহত হয়েছেন, তাঁদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া; ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের প্রতি সমভাবে সংবেদনশীল থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া৷

সাদা দলের নেতা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এমরান কাইয়ুম, আল-আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২২ মে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর প্রথমে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

এর প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ২৪ মে টিএসসিতে ছাত্রদল সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল। ২৪ মে সকালে সেখানে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের মিছিলে বেপরোয়া হামলা করে ছাত্রলীগ।

পিটিয়ে ছাত্রদলের অন্তত ৩০ জন নেতা–কর্মীকে রক্তাক্ত করা হয়। সেদিন দুপুরে দোয়েল চত্বরে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার মুখে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের পেটায় ছাত্রলীগ৷