সেদিন যেনো কালো পাড়ের সাদা শাড়ি মেয়েটির সাথে কাঁদছিলো ঢাকার আকাশ।আকাশের সেই অঝোর কান্না যেনো সংক্রমিত হলো বাবা-মা,ভাই-বোন,ভাবীসহ পুরো পরিবার হারিয়ে ফেলা মেয়েটিকে দেখতে আসা লাখো মানুষের মধ্যে।কি এক বেদনাদায়ক দৃশ্যের অবতরণ হয়েছিলো!
মেয়েটি কার কাছে এসেছে!কেনোই বা এসেছে।যার দুকূলে কেউ নেই,নিরাপদ আশ্রয়টুকু পাওয়া তো দূরের কথা,নেই মাথা গোজার মত স্থানটুকুও।
বিমানটি অবতরণের আগেই লাখো মানুষের পদচারণায় অনুরোধ,অনুনয়,বাধ ভেঙ্গে পড়ে বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে থাকা কতৃপক্ষের।
চারটা বত্রিশ মিনিটে সিড়ি থেকে নেমে ট্রাকে উঠলেন শেখ হাসিনা।"আমরা আছি লাখো ভাই,হাসিনা তোমার ভয় নাই"," ঝড়-বৃষ্টি আধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে","হাসিনা তোমায় কথা দিলাম,পিতৃহত্যার বদল নেব" কিংবা "শেখ হাসিনার আগমন,শুভেচ্ছা স্বাগতম" স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো বিমানবন্দর।আর যেনো কান্না ধরে রাখতে পারছিলেন না বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা।সাথে কাদছিলো বাংলার আকাশ, বাতাস আর লাখো মানুষ।সকলের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো অশ্রু,বৃষ্টিতে একাকার হয়ে যাচ্ছিলো।সারাদেশের মানুষের যেনো গন্তব্য ছিলো সেদিন রাজধানী ঢাকা।লাখো জনতার ভীড়ে, স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাকার রাজপথে সেদিন কুর্মিটোলা থেকে শেরে বাংলা নগর পৌছাতে সময় লেগেছিলো প্রায় তিনঘন্টা।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পৌঁছে লাখো জনতার সামনে আবেগে জড়ানো ভাষণ দেন,যা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গেছিলো।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব হারিয়ে আপনাদের মধ্যে ফিরে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ জনতার উচ্ছ্বাসে তিনি আবেগ ধরে রাখতে পারেন নি। তিনি ভাষণে আরো বলেন ‘আমার আর হারাবার কিছু নেই। পিতা-মাতা—সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের মধ্যেই তাদের ফিরে পেতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।"
দলের সভানেত্রীর এই ভাষণ ছিলো দলীয় কর্মীদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গণতন্ত্রকামীদের জন্য ছিলো দূরদর্শীচিন্তায় ভরপুর।
ব্রাসেলস থেকে জার্মানি,জার্মানি থেকে দিল্লি।দিল্লিতে কাটানো ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ফিরে ছিলেন নিজ মাতৃভূমিতে।১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের রাত্রিতে স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর জার্মানির তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা ব্যতীত তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক কিংবা মন্ত্রীপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কেউ শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং তার বোন শেখ রেহানা কে সহযোগীতা করেনি।ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিল্লির ৫৬ নং রিং রোডে জায়গা হয়েছিলো। পরবর্তীতে নিরাপত্তাজনিত কারণে ডিফেন্স কলোনি,সেখান থেকে তিনটি বেডরুমের পান্ডারা পার্কের 'সি' ব্লকের একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিলো।সেখানে ঘরে বন্দী অবস্থায় কাটানো নির্বাসনের দিনগুলো ছিলো খুবই বেদনার ও একাকীত্বের। বাবা-মা,ভাই-ভাবী,আপনজন
হারিয়ে কারো বুকে মাথা রেখে কান্না করার মত একজন ছিলো না সে সময়টিতে।শেখ হাসিনার খরচ ভারত সরকার কর্তৃক প্রদান করা হত,যা ছিলো খুবই যৎসামান্য।১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয়ের পর ফ্ল্যাটের বিদ্যুত বিল ও পরবর্তীতে গাড়ির সুবিধাটুকু ও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো।নির্বাসিত জীবনে নানাচাপের ভেতরে এই দুশ্চিন্তাগুলোর সমাপ্তি হয় ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে আবারো ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষমতায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে।শেখ হাসিনার অনুপস্থিতে ১৯৮১ সালের ১৪,১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী ইডেন গার্ডেনের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে দলের অবস্থা ছিলো কোণঠাসা।স্বৈরাচার শাসকের চাপে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে,নেতৃত্বস্থানীয় সকলকে হারিয়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ছিলো খুবই ভঙ্গুর।সেইসময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এসে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন।শেষমেষ ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে মেয়েকে নিয়ে দেশের পথে রওনা দেন,সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ও কোরবান আলী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপদগামী সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হন অবৈধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া জিয়াউর রহমান।সেইসময় সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল এরশাদ,যিনি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন অভ্যুন্থানের মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করেন।দেশে ফেরার বছরখানেকের মধ্যেই জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল কে অবৈধ ঘোষণা করে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের রাজনৈতিক দৃঢ়তা,সাহস ও দূরদর্শিতার জানান দে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা।নানাভাবে বিভক্ত আওয়ামী লীগ,তখন আবারো সংকল্পবদ্ধ,তরুণ ও দেহে বঙ্গবন্ধুর রক্ত বয়ে যাওয়া এবং বিশেষ করে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতৃত্বের স্বাদ পেয়ে রাজপথে জ্বলে উঠেছিলো।আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পুরো আওয়ামী লীগ কে এক করেছিলো এবং সেইদিনগুলোতে বহিঃ বিশ্বে নামা সম্মেলনে যোগ দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিজের অবস্থান এবং এইদেশের মানুষের সমর্থনের কথা স্পষ্ট করেছিলেন।
১৯৮৩ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি,১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর নানা মেয়াদে কারাবন্দী হয়ে থাকতে হয়,এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের প্রতি চলতে থাকে অকথ্য নির্যাতন।এসকল কিছু তাকে দামিয়ে রাখতে পারেনি।আন্দোলনের পর আন্দোলন বিছিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর জেনারেল এরশাদ আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ঘোষণা দেন,এরআগে ৪ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা না মেনে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভায় অংশগ্রহণ করেন।সামরিক শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা সারাদেশে বৃদ্ধি পায় এবং তার নেতৃত্বগুণ সম্পর্কে বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদ রা প্রশংসা করতে থাকে।
১৯৯১ সালের পঞ্চম নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সূক্ষ্ণ কারচুপি মধ্য দিয়ে হেরে যায়,সেইসাথে হেরে যায় বাংলার জনগণ রাজনীতিতে কালো টাকার প্রচলনকারী,
সন্ত্রাসশ্রেণীর জন্ম দেওয়া মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট থেকে উত্থিত শাসকগোষ্ঠীর কাছে।
পরবর্তীতে ৯৬' এর জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মত ক্ষমতায় আসীন হয় এবং পরবর্তী ৫ বছর সাধারণ জনগণ তার সুফল ভোগ করে।গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করা,বিচারবিভাগের ক্ষমতাবৃদ্ধি,সাংসদদের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা,বিগত সময়ে দুর্নীতিতে জর্জরিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণ মানুষের সেবার আওতায় নিয়ে আসা,বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মোকাবিলা করা,২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচয় প্রদান করা সহ নানা উল্লেখযোগ্য কর্মের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত হয়।
২০০১ পরবর্তী সময়কাল ছিলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের হুমকিস্বরূপ।বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে প্রধান বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগের উপর হামলা,হত্যা,গুম,
বিচারবিহীন অপরাধে প্রশাসন কর্তৃক অত্যাচার,নির্যাতনে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।দুর্নীতি আর সন্ত্রাস এর সংজ্ঞাকে সাধারণ জনগণকে ব্যবহারিক রূপে মুখস্থ করিয়ে এবং ফলাফলস্বরূপ দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন করিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলো বিএনপি সরকার।
স্থানীয় সরকার কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ায় কেন্দ্রের শাসকদের অত্যাচার,নির্যাতন,দুর্নীতির শিকার হয়েছিলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ জনগণ।এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসী ধারায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিলো।
সেইসময় অনেক অনেক বিজ্ঞ,প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিজেদের সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিলেও সাধারণ জনগণের ত্রাতা হিসেবে আবারো শেখ হাসিনা সকল অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা পালন করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর বাংলাদেশের উপরে নিয়ে আসে।এসময় শেখ হাসিনার উপর আসে সবচেয়ে বড় আঘাত,বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘটনাটি ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা।বিরোধীদলীয় নেতার এরকম নিকৃষ্ট,নির্মম হামলা দেখে পুরো পৃথিবী চমকে যায়।ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বক্তব্য রাখার সময় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সনের ছোটো ছেলে তারেক জিয়ার নির্দেশে মঞ্চের উপর গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয়।মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় সেদিন শেখ হাসিনা খুবই অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত এবং প্রায় শ'খানেক কর্মী আহত হয়।
শুধু সেদিনের হামলা নয়,স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর প্রায় ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।দেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দোয়ায় মহান আল্লাহ উনাকে বারবার জীবন ভিক্ষা দেন।বিএনপির সেই দুঃস্বপ্নের শাসনামল শেষ হতেই দুর্বল গণতান্ত্রিক কাঠামোর সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় আসেন সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার এবং আবারো দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।
সেই আমলে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে সামরিক সরকার।এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের মার্চ মাসে আমেরিকা ও কানাডা গেলে তাকে ফিরে আসতে না দেওয়ার পরিকল্পনা করে সামরিক সরকার।
১৩ই মার্চ ভিসা নবায়ন করতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে গেলে দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হবে—এটা নিয়ে তাঁর কোনো উদ্বেগ আছে কি না। শেখ হাসিনা তখন তাঁদের বলেন, তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন, এমনকি সে জন্য তাঁকে যদি ভারত হয়ে চোরাপথে সীমান্ত অতিক্রম করেও দেশে ঢুকতে হয়, তবু তিনি ফিরে আসবেন (তথ্যসূত্র: উইকিলিকস বার্তা ১৩ মার্চ, ২০০৭)।
কোনো চাপই তাকে আটকে রাখতে পারেনি,অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে আবারো দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ১৪ টি মিথ্যা মামলা দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে আবারো গ্রেফতার করে।তাদের ইচ্ছা ছিলো ফৌজদারি অপরাধে কারাভোগ দেখিয়ে জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রধান উত্তরসূরীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া।
২০০৭ সালের ১৬ ই জুলাই সকাল বেলা যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে শেখ হাসিনাকে এবং জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব জেল ঘোষণা করে কারান্তরীণ করে রাখে।প্রায় ১১ মাস বিনাবিচারে কারাভোগ করেন শেখ হাসিনা।এসময় সসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য সামরিক শাসক বাহিনী নানাধরণের অফার প্রদান করে কিন্তু যারা পিতা এইদেশের স্বাধীনতার জন্য আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন,দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন উনি কোনোকিছুর কাছেই নিজেকে বিক্রি করে দেননি বরং হাসিমুখে সকল কিছু মেনে নিয়েছেন।
দেশের সাধারণ জনগণ এবার আর কারোর আশায় ঘরে বসে থাকেনি।শেখ হাসিনার মুক্তিই ছিলো সামরিকশাসকদের হটানোর একমাত্র পথ ইহা বুঝতে পেরে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন শুরু হয়।জনরোষের মধ্যে পড়ে তত্বাধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ১১ ই জুন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।এরই মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আবারো পুনরুদ্ধার হয়।
শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলনের সুযোগে তৎকালীন গ্রেফতারকৃত আরেক নেত্রী খালেদা জিয়া ও মুক্তি পায়।
পরবর্তী সময়টুকুতে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশের।হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি বলা বাংলাদেশ যেনো সুদক্ষ নেতৃত্ব পেয়ে প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রযাত্রার পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।জনগণ কে সাথে নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কে রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে যে স্বপ্ন বাংলাদেশের মানুষকে দেখিয়েছিলো,সারা পৃথিবীকে অবাক করে পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে।ইশতেহার শুধু যে বইয়ের পাতা নয়,প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে নিরলস প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে জনগণের কল্যাণে তা বাস্তবায়ন করেছে।অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দেশকে সংবিধান অনুযায়ী পরিচালনা করেছেন।সকল বাধা-বিপত্তি,
চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশকে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে এসেছেন এবং উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য একাগ্রতার সাথে দেশের জনগণ কে সাথে নিয়ে দ্রতগতির ট্রেনে ছুটে চলছেন।সার্বভৌমকে রক্ষা করে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ছড়িয়ে দিয়েছেন।যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থান পুরোটাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বের কারণে।দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা মোতাবেক অবকাঠামোগত উন্নয়নে অভূতপূর্ব বাস্তবায়ন সাধন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর আর্থিক সাহায্য ছাড়াই দেশের অনেক স্বপ্নের মেগাপ্রজেক্ট আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে যা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা সহ সাধারণ মানুষের জীবনে রাত-দিন পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ হচ্ছে এসকল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।বিগত নানাসময়ে পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা গেলেও,শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় এসকল দূর্যোগ থেকে অনেকটাই বেঁচে গিয়েছে বাংলাদেশ।উদ্ভাবনী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি কৃষিপ্রধান অর্থনীতির দেশ থেকে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে।সার পৃথিবীতে এখন জ্ঞানী-বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ রা 'হাসিনোমিকস' নিয়ে রিসার্চ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।করোনা থেকে শুরু করে যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে সরকারের পাশাপাশি দলকে নিয়ে জনগণের পাশে দাড়িয়েছেন।ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়েও সফলতা নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা।বিশ্বরাজনীতির মেরুকরণের যুগে প্রতিটি উন্নত ও প্রভাবশালী বিশ্বমোড়লদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।নারীর ক্ষমতায়নে,মানবসম্পদ তৈরীতে,মা ও শিশুসেবা,বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।পার্বত্য এলাকায় প্রথম দফায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যেভাবে সফল শান্তিচুক্তি করেছিলো, ঠিক সেভাবেই পিছিয়ে পড়া নৃ-গোষ্ঠীর মানুষজনকে এগিয়ে নিতে নানাধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন,যার মধ্য সেই এলাকার চিকিৎসা সেবা,ডিজিটাল সেবা,পর্যটন ব্যবসার সুবিধা, আধুনিক যাতায়াত সুবিধা ভোগ করছে।দেশের নিম্নশ্রেণীর মানুষের কাছে শেখ হাসিনা ভালোবাসার,শ্রদ্ধার এবং তাদেরই একজন হয়ে উঠেছেন সময়ের সাথে সাথে।বস্তিবাসীদের জন্য,গৃহহীনদের জন্য এবং নিম্নশ্রেণীর অনেক মানুষের আশ্রয়ের জন্য শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্বে সারাদেশে বিনামূল্য কিংবা নামমাত্র মূল্যে আশ্রয়ণের ব্যস্থা করা হয়েছে।দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যথাযথ সম্মানপ্রদর্শন এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং সেবার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।শেখ হাসিনা সরকার, সরকারি, আধা সরকারি চাকরি থেকে অবসরে আসা এবং দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ও গুরুত্বপূর্ণ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা উন্নয়ন করেছেন,আজকের এই বাংলাদেশ তারই প্রমাণ।শেখ হাসিনার নিজ হাতে আজকের এই বাংলাদেশ, সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে আছে।মাত্র কয়েকবছর আগেও,এদেশের সহজ-সরল মানুষের কাছে যা ছিলো পুরোটাই স্বপ্ন, তা আজ অনেকাংশেই বাস্তবে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে।
বাংলাদেশের আঙ্গিনা ছাড়িয়ে শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এক প্রভাবশালী চরিত্র।আজ বিশ্বদরবারে যেকোনো রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবলেই,তাদের সামনে ভেসে আসে এক লৌহমানবীর কথা,যিনি তার বাবার মত রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বার্থে এক পা নড়তে নারাজ।মৃত্য কিংবা ক্ষমতা থেকে উৎখাত কোনো ষড়যন্ত্রের ভয়ই তাকে পিছু হটাতে পারেনি।আন্তর্জাতিক প্রতিটি ইস্যুতেও শেখ হাসিনার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত মানবিক এবং দূরদর্শী, যা ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার।পশ্চিমাদের স্বার্থান্বেষী কূটনৈতিক অপতৎপরতা রোধে সারাবিশ্বে শোষিতদের হয়ে প্রতিবাদী লকন্ঠস্বর হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে তুলে ধরেছেন পুরো বিশ্বের সামনে।দশ লাখ রোহিঙ্গা কে নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়া এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে সরাসরি ভূমিকার মধ্য দিয়ে কঠোর,মানবিক এবং সাহসী নেতৃত্বের পরিচয় ফুটে উঠেছে।এছাড়া বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব নিরসনে শেখ হাসিনার পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।এছাড়া আরো নানাসামাজিক আন্দোলনে সারা পৃথিবীতেই ইতিবাচক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা।
'রূপকল্প-২০২১যেভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে ঠিক একই ধারায় শেখ হাসিনার দৃঢ় ও অদম্য নেতৃত্বে নির্দিষ্ট ইশতেহার পূরণ করেই আগামীতে 'ভিশন-২০৪১' বাস্তবায়ন হবে বলে আজকে বাংলাদেশের জনগণ আশাবাদী।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তারই তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার আগামীর
'স্মার্ট বাংলাদেশ' পৃথিবীর বুকে অচিরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেই প্রত্যাশা রইল।
আমার মনে পড়ে যায়, কুসুমকুমারির দাশের লেখা সেই বিখ্যাত কবিতার কথা,
"আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
‘মানুষ হইতে হবে’ – এই যার পণ৷"
আমার মনে হয় আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর তনয়া বাংলার মায়েদের রত্ন শেখ হাসিনা সেই কন্যা,যার সর্বদা মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হবে এই যার পণ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখজ:
সহ-সভাপতি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।