কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাবিতে আনন্দ মিছিল


DU Correspondent | Published: 2024-06-06 11:11:45 BdST | Updated: 2024-06-23 09:40:26 BdST

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।

বুধবার (৫ জুন) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে আনন্দ মিছিল করে সংগঠনটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কানিজ ফাতেমা।

কানিজ ফাতিমা বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তানরা এখনও বেকার জীবন যাপন করছেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দেশ স্বাধীনের পর অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়িতে ফিরে দেখেন তাদের বাড়ি-ঘর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জ্বালিয়ে দিয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেছিলেন।

অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, পালিয়ে বেড়ানো সব মিলিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২১ বছর কোনো সুবিধা পাননি। এমনকি তারা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত হারিয়েছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি অবিলম্বে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারি করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।

 

সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারি করুন। দাবি আদায় না হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেশের তরুণ সমাজ স্বাগত জানাচ্ছে।

এই বিজয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিজয়। প্রশাসনে জামাত-শিবিরের প্রবেশ বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাবির ভিসির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে কোটা বাতিলের অবৈধ পরিপত্র জারি করিয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অবৈধ ও অযৌক্তিক আন্দোলনের কারণে সরকার ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সংবিধান পরিপন্থি একটি পরিপত্র জারি করেছিল।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে জারি করা সংবিধান পরিপন্থি সেই পরিপত্রকে অবশেষে অবৈধ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে হাইকোর্ট। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী সব শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, জেলা কোটা ও আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল করার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক শরীয়তুল্লাহ বলেন, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ক্ষতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে তাদের একটু মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলা কোটার কারণে পিছিয়ে পড়া জেলার ছেলেমেয়েরা বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরিতে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। নারী কোটার কারণে নারীরা বিসিএসে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। আজকে নারীরা সচিব পর্যন্ত হতে পেরেছেন।

এছাড়াও সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক শরীয়তুল্লাহ, ঢাবি শিক্ষার্থী খোকন মিয়া, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আল ইমাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন, ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি ইকবাল হোসেন ভূইয়া বক্তব্য দেন।