না ছিড়ে ফুলের বাগানে রাখুন অপরাজিতা


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2019-08-23 09:39:44 BdST | Updated: 2024-05-18 14:20:00 BdST

নানা রঙের ফুল আমরা দেখতে পাই। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা- কত রঙের ফুল আছে। এর মধ্যে নীল ফুল মানেই অপরাজিতা। আরও চমকপ্রদ নাম রয়েছে ফুলটির। এর বৈশিষ্ট্যও অনেক। আসুন জেনে নেই অপরাজিতার চাষ সম্পর্কে-

পরিচয়: অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর ইংরেজি নাম ‘বাটারফ্লাই পি’। গাঢ় নীল বলে একে ‘নীলকণ্ঠ’ নামেও ডাকা হয়। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প। ফুলের ভেতরের আকৃতির জন্যই এ নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’।

flower

বৈশিষ্ট্য: লতানো এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে এ ফুল হয়ে থাকে। তবে ফুলে কোনো গন্ধ নেই। তবু রঙের বাহারে ফুলটি অনন্য। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। লতা জাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয়। 

রোপণ: অপরাজিত ফুল গাছের ডাল বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়। ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো যায়। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি বেড়ে ওঠে।

flower

প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমির বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বলধা গার্ডেন ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ রয়েছে।

গুণাবলী: অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয়। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। হিন্দুদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পূজায় এ ফুল ব্যবহার করা হয়।

flower

সময়কাল: এই ফুলের বয়স অন্তত ৫ কোটি বছর। নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি ছড়ায় না।

খাদ্য হিসেবে এর প্রচলন তেমন একটা না থাকলেও এর রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। চীনে এই ফুল শুকিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় চা তৈরি করে পান করা হয়। থাইল্যান্ডে এই ফুল খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। লিখেছেন ডায়েট প্লানেট নিউট্রিশন কনসালট্যান্সির পুষ্টিবিদ মাহবুুবা চৌধুরী

♦ অপরাজিতায় তিন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি দেহে অক্সিডেন্টিভ স্ট্রেস কমিয়ে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরিতে বাধা দান করে এবং ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

♦ হরমোনের সমতা বজায় রাখে, গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

♦ এই ফুলের তৈরি চা অতিরিক্ত ওজন ও বাতজনিত ব্যথা কমায়, সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ধত্ব, চোখের ছানি ও নানা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

♦ এই চা লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে চর্ম ও চুলের কোমলতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

♦ মস্তিষ্কের রোগ ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার ইত্যাদি নিরাময়েও এর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য এই ফুলের চা-কে ‘ব্রেনটনিক’ বলা হয়।

♦ অপরাজিতার রস গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ডায়াবেটিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।

♦ কোষ্ঠকাঠিন্য ও মাইগ্রেন রোগে বেশ কাজ দেয়।

♦ প্রতিদিন ১০-১২টি ফুল কাঁচা বা শুকনো এককাপ পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে দুই চা চামচ লেবুর রস+এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করা যায়। এতে দেহের অবসাদ দূর হবে, মন চাঙা হবে।

♦ এই ফুল টবে বা বাগানে চাষ করে পুরো বছরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।