প্রতি বছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেটা বৃদ্ধি করে ৫০টি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরপর বিশেষ কোটা থেকে অতিরিক্ত আরও ৩৩টি বৃত্তি দিয়ে আগামী বছর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ৫০টি কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩ জুন) এক বৈঠকে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এবং সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আল-ইমামুল আকবার আহমাদ আত-তায়্যিবের সঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই অনুরোধ জানান। শাইখুল আজহার আগামী বছর থেকে বৃত্তি ৫০টি করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত বলেন, আলোচনা সফল হয়েছে। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়ন সংক্রান্ত নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানিয়ে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীকে চির স্মরণীয় রাখতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের কথা বললে, আল-ইমামুল আকবার নীতিগত অনুমোদনে রাজি হন। যা কায়রোর কেন্দ্রস্থল আল-আজহারের ক্যাম্পাসের নিজস্ব জমিতে করা হবে।
বাংলা ভাষা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বাংলা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার আবেদন করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন ও আল-আজহারের মধ্যম পন্থী আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশে আল-আজহার ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন মিসরের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনা মহামারি চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ঈমাম প্রশিক্ষণ, ইসলামী স্কলার ও শিক্ষা বিভাগ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি সফর বিনিময়ের কথাও আলোচনা হয়েছে।
আলাপচারিতার একপর্যায়ে রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম আজহারকে বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন ও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি আরও বলেন, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূল্যায়ন করে। অধ্যয়নরত বিদেশি ছাত্রদের মেধা, মনন বিকাশ ও সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ইসলামের সঠিক দাওয়াত প্রচারের জন্য নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বদেশে ফিরে গিয়ে ইসলামের মধ্যমপন্থি চিন্তাকে প্রচার ও প্রসার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বললেন, আজহার ইসলামের উদার আদর্শকে প্রচার করে, ভ্রান্ত চিন্তা-দর্শনকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে, সমস্ত ধর্মে স্বীকৃত শান্তির বাণী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ১৫৫টি শ্রেণি কক্ষে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষক পাঠদান করেন। তাদের কাছ থেকে পাঠগ্রহণ করেন ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ২০ শতাংশ বিদেশি। বর্তমানে ১০২টি দেশের শিক্ষার্থী আল–আজহারে লেখাপড়া করছেন।