আরাকান রাজ্য স্বাধীন করে দেয়া হোক


এম এম শাহীন | Published: 2017-08-29 04:35:53 BdST | Updated: 2024-05-04 23:18:16 BdST

কতটা অসহায় মানবতা আজ, রোহিঙ্গারা কি মানুষ নয়? মানবতাবাদী ও বামপন্থী মানবাধিকার কর্মীরা আজ কই? নাকি আজ ওরা মুসলিম বলে আপনাদের মুখে কুলুপ এঁটেছেন? 'ধর্ম নয়, আগে মানুষ', আপনাদের এ নীতি কি আজ ভুলে গেলেন? যদিও অল্প কয়েকজন কথা বলছেন।  

এই অঞ্চলের নোবেল বিজয়ীদের কি ওদের নিয়ে কথা বলার কোন দায়িত্ব নাই? এসব শান্তির নামে ব্যবসায়ীদের নোবেল কেড়ে নেয়া হউক।  বাংলাদেশ যখন অসহায় ছিল ভারত আমাদের সাহায্য করেছে, আমাদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানী হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অনুরূপভাবে আমাদেরো উচিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা। অতঃপর জাতিসংঘকে সাথে নিয়ে এদের উন্নয়নে কাজ করা। যেরূপ ইউরপিয়ান দেশগুলো জাতিসংঘের সহযোগীতায় ও অর্থে অভিবাসীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এটা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে ভারতকে সাথে নিয়ে আরাকান রাজ্য স্বাধীন করা হউক। 

রাখাইন রাজ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার। গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ওপর দোষ চাপানো হয়। এরই জের ধরে তাদের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। মিয়ানমারের আরাকানে কথিত মতে জঙ্গি রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। বস্তুত অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেও তাদের অস্বীকার করা হচ্ছে।

শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রেহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যা করছে তা সভ্যতা-ভব্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, তারা এখন দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা, জুলুম-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বমানবতাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার মেনে নিতেও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মিয়ানমার তো পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। তাদের যা খুশি তা করার অধিকার নেই। মিয়ানমারে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তার দায় রোহিঙ্গাদের ওপর চাপানো মোটেও সমীচীন নয়।

‘শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রেহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের ৯ অক্টোবর সহিংস হামলায় অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। যার ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করেছে। শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির দল ক্ষমতায় আসায় এ আশা দৃঢ় হয়েছে যে, সেখানে জাতিগত বিদ্বেষ বন্ধ হবে। কিন্তু অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চরম বর্বরতা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রোহিঙ্গা কমিশন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে- এমন আশা আজ দুরাশায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রবেশাধিকার দেয়ার অনুরোধ করছে। কিন্তু মিয়ানমারকে নির্যাতন বন্ধে কোনো চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে ১৯৭০ সাল থেকে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে। এখন প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের নিয়ে নানা সমস্যায় আছে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ। বিষয়টি মানবিক হলেও এরপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দেওয়া বাংলাদেশের জন্য দুরূহ ব্যাপার।

সমস্যার সমাধান আসলে মিয়ানমারের হাতেই। আধুনিক সভ্যতায় কোনো জাতিগোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। তাদের দায়-দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। সমস্যা অস্বীকার করে সমাধান আশা করা বাতুলতা। আমরা আশা করবো, ক্ষমতার পাদপ্রদীপের নিচে থাকা অং সান সুচি এ ব্যাপারে মানবিক হয়ে তার শান্তিতে নোবেল লাভের সুখ্যাতির প্রতি সুবিচার করবেন।

আচ্ছা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যদি আমাদের এভাবে তাড়িয়ে দিত? কি অবস্থা হতো আমাদের ভাই-বোনদের, একটু কল্পনা করুন তো। রোহিঙ্গা মানুষগুলো কত আশা নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসছিল নিরাপদে থাকবে, আমরা তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছি? সীমান্তবাসীরা হয়ত ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কিছুটা সহায়তা করছেন, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এখন রোহিঙ্গাদের জন্য দরকার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা।

আপনি জানেন কি, এখনো লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে কত মানুষ ইতালিতে প্রোবেশ করছে, শুধু মাত্র কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য? সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির প্রান্তে যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পর্যাপ্ত খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেয়। এ তালিকায় বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়। আমাদের গ্রামেরই অনেকে আছে । যখন শুনি তারা ইতালির পুলিশের কাছে আছে তখন ভালো লাগে যে নিরাপদে আছে, আর আমরা রোহিঙ্গাদের পুশ ব্যাক করছি। মনবিক নয়ই, দিন দিন আমরা বড়ই স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি।

 

ছবির মুখগুলির দিকে একটু তাকানতো, কেমন অনুভূতি হয়। মানবিক মনের হলে কান্না আটকে রাখতে পারবেননা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেককেই ফিরিয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপেক্ষা করছে নো ম্যানস ল্যান্ডে। তবে যারা ঢুকে পড়েছে তাদের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নাফ নদীর পাড়ে বহু মানুষ অপেক্ষা করছে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের। পরিবারের সঙ্গে নবজাতক, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ, সদ্য স্বামী হারা নারী—ভিটেমাটি ছেড়ে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ওদিকে রাখাইন রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিছু আ*দা পোলাপাইন বলছেন, রোহিঙ্গারা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে, ওরা ইসলামী জঙ্গী। আরে বেয়াদব, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও তো সশস্ত্র ছিল, ফাকিস্তানিরাতো তাদেরকেও জঙ্গি বলেছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বসূরিরাতো আমাদের অধিকার আদায়ে পিছ পা হয়নি। সবসময়ই মুক্তি যোদ্ধাদের জঙ্গী বলে দমানোর প্রচেষ্টা চলে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

এমএসএল