শিক্ষার উদ্দেশ্য কি শুধুই চাকরি জোগাড়


Dhaka//Prothomalo | Published: 2021-01-03 06:10:33 BdST | Updated: 2024-03-29 19:19:08 BdST

শিক্ষাকে বলা হয় মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ। কেননা, সামগ্রিকভাবে একজন মানুষের বিকশিত হতে যেসব অপরিহার্য উপকরণ প্রয়োজন, এর মধ্যে শিক্ষার স্থান সর্বাগ্রে। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত সুপ্ত প্রতিভাকে উন্মোচিত করে আনার এক অনিবার্য উপায়। দার্শনিক কান্ট বলেছেন, আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনই শিক্ষা। হাবার্ট রিড বলেছেন, মানুষকে মানুষ করাই হলো শিক্ষা। অথচ আজ আমাদের শিক্ষা অর্জন শুধু ভালো রেজাল্ট কিংবা চাকরিভিত্তিক হয়ে গেছে। হবেইবা না কেন? আমাদের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা তাকেই মূল্যায়ন করে, যে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় কিংবা যে একটি ভালো চাকরি করে। যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ কিংবা ভালো একটি চাকরি পায় না, তাকে আমরা কখনো মূল্যায়ন করতে চাই না। তাকে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে চাই না।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যে এখনো গৎবাঁধা পুস্তকভিত্তিক তাত্ত্বিক শিক্ষাপদ্ধতি রয়ে গেছে, তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো মাধ্যমিক পর্যায়ে যখন একজন শিক্ষার্থীকে ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা লিখতে বলা হয়, তখন দেখা যায় কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কেউ পুলিশ হতে চায়, কেউ শিক্ষক হতে চায়, কেউ আইনজীবী হতে চায়, কেউবা পাইলট হতে চায়। কিন্তু বাস্তবে কতজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, শিক্ষক, আইনজীবী বা পাইলট হতে পারে?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য যদি হয় সুনাগরিক তৈরি করা, সুশিক্ষিত ও মানবিক মানুষ গড়ে তোলা, তাহলে এ সমাজ ও অভিভাবকেরা জানবেন, তাঁদের সন্তান জিপিএ-৫ পাওয়া কিংবা চাকরির জন্য নয়; বরং মানুষের মতো মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করছে। একজন শিক্ষক জানবেন, তিনি ছাত্রদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার নৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন।

আমাদের জাতীয় লক্ষ্য হতে হবে তথাকথিত শিক্ষিত গড়ে না তুলে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতাসম্পন্ন জনবল তৈরি করা। শিক্ষার মানদণ্ড জিপিএ-৫, ভালো সিজিপিএ কিংবা চাকরি নয়; বরং তা হওয়া উচিত সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা ও দেশপ্রেম। এসবের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও মানবিক জনশক্তিতে পরিণত করে সুনাগরিকতার শিক্ষায় তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এগুলোই হওয়া উচিত এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ ধরনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতে হবে। তবেই এ দেশ থেকে তথাকথিত শিক্ষিতের বদলে দক্ষতা ও মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি হবে। দেশের টেকসই উন্নতি হবে এবং তা আমাদের আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাবে।

লেখক: মো. শাহিন আলম, শিক্ষার্থী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

//