‘র‌্যাগিং’ নিয়ে রুয়েট ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ


রুয়েট টাইমস | Published: 2018-01-25 04:08:57 BdST | Updated: 2024-05-20 21:51:11 BdST

আধিপত্য বিস্তার ও র‌্যাগ দেওয়া নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। রুয়েটের সভাপতি নাঈম রহমান নিবিড় ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপুর অনুসারীদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই দফায় রুয়েটের হামিদ হলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান নিবিড়ের অনুসারী ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে আটজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজন মাথায় আঘাত পাওয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আহত আটজন হলেন রুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুপম ও বাপ্পী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদি মোহাম্মদ তানজীম, দপ্তর সম্পাদক সাব্বির, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাহাত, সহসম্পাদক যাওয়াদ, সদস্য পিয়াল ও কর্মী জোহান। তাঁদের সবাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা সবাই হামিদ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

অভিযোগ রয়েছে, রুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবিদ হাসান মিতুল ও অনিক বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিয়াম মালিক, প্রচার সম্পাদক মাহাথির ও কর্মী স্বাক্ষরসহ ১০ থেকে ১২ জন ওই মারধর করেছেন। এঁরা সবাই রুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তপুর অনুসারী।

রুয়েট ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ দিয়েছিলেন বিভাগের ১৪ সিরিজের শিক্ষার্থী ও রুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদি মোহাম্মদ তানজীম ও তাঁর বন্ধুরা। নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন রুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সিএসই বিভাগের ১৪ সিরিজের আরেক শিক্ষার্থী আবিদ হাসান মিতুলের ছোটভাই। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে সাদির সঙ্গে কথা বলতে যান আবিদ হাসানসহ ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় হামিদ হলের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারধর শুরু হলে রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নিবিড় ও সাধারণ সম্পাদক তপু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে নেতাকর্মীরা তাঁদের সামনেই রড, চাপাতি, রামদা, বাঁশ দিয়ে মারামারি করেন।

এ সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাথমিক মীমাংসা হলেও হল থেকে বের হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা মারধর করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন সভাপতির অনুসারীরা। রাত ১টা পর্যন্ত এ উত্তেজনা চললে পরে রুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই র‌্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান নিবিড় বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের নেতাকর্মীরা ইচ্ছেকৃতভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। সম্পাদকের উপস্থিতিতে ও তাঁর মদদেই এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঠিক জানি না, কী কারণে তারা হামলা করেছে। আহতরা সবাই চিকিৎসাধীন। তাঁরা একটু সুস্থ হলে তাঁদের সাথে কথা বলব। মারধরের সময় তারা আমাদের নেতাকর্মীদের মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা প্রশাসন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগকে জানিয়েছি।’

তবে সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপু বলেন, ‘আসলে মারধর করা ও আহতদের বেশির ভাগই ১৪ সিরিজের শিক্ষার্থী। তাঁদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে মারামারি করেছে। আমি ও সভাপতি ঘটনা শুনেই হলে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক মীমাংসা করার পরও তাঁরা আবার মারামারি করেছে। ছোট ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে সৃষ্টি হয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু র‌্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেনি।’

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা গ্রুপিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন তপু। তিনি বলেন, ‘নিবিড় ভাই আমার কাছের বড় ভাই। আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই।’ তবে তাঁদের বর্তমান কমিটি নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করে এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।

হলের ঘটনার বিষয়ে হামিদ হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। আজ বুধবার রুয়েটের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন চলছে বিধায় আমরা একটু ব্যস্ত। তবে বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আলোচনায় বসে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাহবুব আলম জানান, রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

আরএম/ ২৪ জানুয়ারি ২০১৮