রাবির স্বাস্থ্য বিমার আওতায় ৮১৬ শিক্ষার্থী পেয়েছেন ৪১ লাখ টাকা


RU Correspondent | Published: 2023-05-20 03:58:57 BdST | Updated: 2024-04-25 00:02:14 BdST

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে গতবছর ১ জুলাই থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চালু হয়েছে স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প। এ বিমা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৮১৬জন শিক্ষার্থী ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ টাকা সুবিধা পেয়েছেন। এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ফাইল। যার অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য বিমার চুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে (৩ মাসে ৪ বার) ৮০ হাজার টাকা ও বহির্বিভাগে (একদিনের হলেও প্রযোজ্য) ২০ হাজার টাকা পাবেন।

এছাড়া প্রতিমাসে একাধিকবার কনসালটেন্সি ফি, মেডিকেল ফি, প্যাথলজি ফি ইত্যাদি বাবদও এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিমা চলাকালে মৃত্যু হলে সেই শিক্ষার্থী ২ লাখ টাকা পাবেন।

বিমা কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮১৬ জন শিক্ষার্থীকে এ সুবিধা প্রদান করেছেন তারা। যার অর্থের পরিমাণ ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৩ শ ৪১ টাকা। বিমা চলাকালে মৃত্যু হওয়ায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পেয়েছে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর পরিবার। এছাড়াও দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা পর্যন্ত এ সুবিধা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ফাইল প্রক্রিয়াধীন যার অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিমার শর্ত বহির্ভূত হওয়ায় আবেদনের ফাইল প্রক্রিয়াধীন আছে ৬৬টা। যার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমা সংক্রান্ত পরামর্শ এবং বিষয়গুলো তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সেল নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের তত্বাবধানে এই বিমা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিমা অনলাইন সিস্টেম হওয়ায় একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ru.ac.bd প্রবেশ করলেই নিচে student insurance দেখাবে সেখানে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর আইডি নং ও রেজিষ্ট্রেশন নং দিলেই তার প্রোফাইল চলে আসবে। সেখানে ফরম পুরণ করে সাবমিট করলে ফরম পেয়ে যাবে বিমা কোম্পানি। যদি ফরমে ভুল তথ্য না থাকে তাহলে নিদিষ্ট সময়ে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাংক একাউন্টে বিমার টাকা চলে আসে। তবে বিমা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী রোগে আক্রান্ত হলে তারাই শুধু এ বিমার সুবিধা পেয়ে থাকবেন।

স্বাস্থ্য বিমা থেকে ৬৭ হাজার ৫ শ টাকা সুবিধা পেয়েছে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি একটি জটিল রোগের কারণে প্রায় ৪ মাস অসুস্থ ছিলাম। আমার সুস্থ্ হতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমা থেকে আমি সুবিধা পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তবে টাকা পেতে আমার অনেক বেগ পেতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমায় যে জটিলতা রয়েছে তা কিছুটা কমিয়ে আনা উচিত বলে মনে করছেন এ শিক্ষার্থী।

কিডনিতে পাথর হওয়ার ফলে চিকিৎসা করতে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু হাসনাত আবদুল্লাহর। পরে কাগজপত্র দেখিয়ে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আবেদন করলে ৭০ হাজার ৫ শ টাকার মতো সুবিধা পান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য ৭০ হাজার টাকা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। আমি অনেক উপকৃত হয়েছি এ সুবিধা পেয়ে। তবে আমার এ সুবিধা পেতে প্রায় সময় লেগেছিল তিন মাস। এক পর্যায় ভেবেছিলাম টাকাটা আর পাব না, কিন্ত আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি। স্বাস্থ্য বিমা সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিদিষ্ট কোনো কার্যালয় নেই ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এ বিষয়ে প্রশাসন নজর দিবে বলে আমি আশাবাদী।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ক্লেইম জমা পড়ছে। ফলে আমাদেরকেও এ চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু এ বিমা অনলাইন সিস্টেমের আওতায় ফলে রাতেও আমাদের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।

এ সুবিধা পেতে অতিরিক্ত সময় নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দেওয়ায় দাবি (ক্লেইম) পরিশোধে সময় লাগছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনও ভালো করে জানে না। নিজের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার না দিয়ে অন্যের একাউন্ট দিচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পিডিএফ ফাইল প্রদান করে থাকে কিন্তু আমাদের পিডিএফ ফাইল গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোর জন্য অনেক সময় কিছুটা সময় লাগে। তবে সময় কমিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য বিমা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার প্রধান এ এইচ আসলাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরামর্শে আমাদের এ স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হয়েছিল। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা সুবিধা পাচ্ছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। স্বাস্থ্য বিমা চালু হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং আবেদনকারী শিক্ষার্থীর এখন আরও বাড়ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা অসুস্থ্ হলে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য অর্থ ব্যবস্থা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিমা চালু হওয়ায় পর থেকে এসব শিক্ষার্থীরা এ সুবিধার আওতায় এসে অনেক উপকৃত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থীরা যারা জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরকেও দ্রুত এ সুবিধার আওতায় আসার আহ্বান জানান তিনি।