দেশের গণতন্ত্র মেরামতের দাবিতে রাবি শিক্ষকের পদযাত্রা


RU Correspondent | Published: 2023-09-23 14:14:51 BdST | Updated: 2024-05-06 20:14:24 BdST

দেশের গণতন্ত্র কাঠামো মেরামতের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসের জোহা চত্বর থেকে পূর্বনির্ধারিত এ কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রায় ১০ কিলোমিটার হাঁটার পর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সাহেব বাজারে এসে পদযাত্রা শেষ করেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সবাইকে পদযাত্রায় যোগদান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে লিখেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে৷ কিন্তু দেশে গণতন্ত্র কার্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত, বিপন্ন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজ চরমভাবে নিষ্পেষিত এবং উপেক্ষিত – বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে এবং বিরোধী দল ও মতের প্রতি দমন-পীড়ন মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমাদের এই নাজুক অবস্থার সুযোগে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তির তৎপরতা বেড়েছে, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর হবে না।

তিনি আরও লিখেছিলেন, দেশ ক্রমশ একটি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা আমাদের শংকিত এবং উদ্বিগ্ন করছে। আমরা দেশে শান্তি চাই, গণতন্ত্র ফিরে চাই! এ দেশ আমাদের, এ স্বাধীনতা আমাদের। সচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে গণতন্ত্র রক্ষায়। আমাদের সংবিধান শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আসুন, গণতন্ত্র মেরামতের দাবিতে একটি নির্দলীয় নীরব পদযাত্রায় শামিল হয়। গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটু পথ হাঁটি। গণতন্ত্রের অন্ধকার দূর করতে দেশপ্রেমের একটু আলো ছড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অংশ নিই। দেশের জন্য না হয় একটু কষ্ট, কিছু ঘাম, কিছু ক্লান্তি উৎসর্গ করি। অন্তত, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন আমাদের ভীরু, কাপুরুষ না ভাবে।

পদযাত্রা কর্মসূচির ব্যাপারে অধ্যাপক ফরিদ খান বলেন, আমরা এ দেশের নাগরিক। আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু আজ নানা কারণে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সচেতন ও শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব আছে দেশের গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান রেখে আন্দোলনে নামা ও সোচ্চার হওয়া। কিন্তু দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো দিনে দিনে জটিল ও সহিংসতার দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই না কোনো ধরনের সহিংসতা হোক। আমরা চাই দেশে একটি ভালো গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরে আসুক।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন রেটিং বলছে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হাইব্রিড ও ক্রটিপূর্ণেরও নিচে। দেশের মিডিয়ার অবস্থাও খুব খারাপ। আমাদের দেশে ভোটাধিকার নেই। সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখে, তাদের ভোট হয়ে গেছে। তাহলে দেশে কিভাবে গণতন্ত্র থাকতে পারে বলে তিনি প্রশ্ন তুলেন।

জোহা চত্বরে ফরিদ উদ্দিন খানের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল হক, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সংগঠনের রাজশাহীর সমন্বয়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী ও শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান।